ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারতের দুই ধনকুবের গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানি বিশ্বের অভিজাত এলিট সেন্টিবিলিয়নিয়ার্স ক্লাব বা ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েছেন।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত তালিকা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্তের বিয়ের উদযাপনের জমক দেখে মানুষের চোখ কপালে উঠেছিল। সাত মাস ধরে চলা এই বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের বিনোদন দিতে রিহানা থেকে জাস্টিন বিবার কাকে না আনা হয়েছিল।
এই অনুষ্ঠানের আনুমানিক ব্যয় ৬০০ মিলিয়ন ডলার, এই অনুষ্ঠান পৃথিবীবাসীর সামনে ভারতের সুপার ধনীদের আত্মবিশ্বাসের ছবি তুলে ধরেছিল। তবে ছয় মাস পর পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে গেছে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এবং আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি দুই ভারতীয় ধনকুবেরই কঠিন সময় পাড় করছেন। বর্তমানে তাদের ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত সুনাম উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রিলায়েন্সের এনার্জি ও রিটেল ব্যবসা কিছুটা থমকে যাওয়ায় আম্বানির ব্যবসা তেমন ভাল যাচ্ছে না এবং সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে।
অন্যদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তের মুখে পড়ে আদানির সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে।
গত বছর তার বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য কমে যায়। সেই প্রথমবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নড়েচড়ে বসে। সেই থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছেন আদানি।
এরপর তিনি যখন ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়ের জেরে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতের রায়ের জেরে গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য অনেকটাই কমে গেছে। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
তবে দুইবারই অভিযোগ অস্বীকার করে আদানি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন অভিযোগের পরে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্বমানের নিয়ন্ত্রক কমপ্লায়েন্স’ মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিটি আক্রমণ ‘আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে’।
সম্ভবত এগুলোর ফলে নতুন বছরে আদানির প্রতিষ্ঠান এবং তার শেয়ারের দামের ওপর চাপ পড়বে।
হিন্ডেনবার্গের আক্রমণের পর আদানি তার আর্থিক অবস্থান শক্তিশালী করতে জোর পদক্ষেপ নেওয়ার পর গত জুন মাসে তার সম্পদ রেকর্ড ১২২.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
তবে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, বর্তমানে তিনি ৮২.১ বিলিয়ন ডলারের মালিক। তবে সম্প্রতি বিলিয়ন ডলারের ক্লাব থেকে ছিটকে পড়া একমাত্র ভারতীয় ধনী নন তিনি।
এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সম্পদও কমেছে, তবে তার সম্পদ কমার হার আদানির চেয়ে কিছুটা কম।
জুলাই মাসে আম্বানির সম্পদ রেকর্ড প্রায় ১২০.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
তার প্রধান ব্যবসা রিলায়েন্স গ্রুপ ভালো আয় করতে না পারা থেকে শুরু করে, জ্বালানি ব্যবসায় সংকট এবং রিটেইল ব্যবসায় ভোক্তা চাহিদা কমে গেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৯৬.৭ বিলিয়ন ডলারে।
আম্বানি তার ব্যবসার উন্নতির জন্য একটি কৌশলগত পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তার কনগ্লোমারেট প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা, খুচরা ব্র্যান্ড এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তবে খুচরা ব্যবসায় বিক্রি ও মুনাফার হার কমে গেছে।
এছাড়া, ভারতের প্রধান শহরগুলোর মুদির দোকান এবং গৃহস্থালির পণ্য বাজারে ডিজিটাল ব্যবসায়ীরা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।