ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপির পক্ষ থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলটির নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ।
বাড়ি বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত ‘সময় সাপেক্ষ’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ মন্তব্য করে বিএনপির নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মঈন খান বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে সৎভাবে সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই, তাহলে কিন্তু বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, কম্পিউটার এআই… আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা অবশ্যই সঠিক হবে। আমি কোন দিন ১৮ বছর হয়ে যাব, সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ‘ডামি প্রতিনিধি’ না, ‘ভুয়া প্রতিনিধি’ না, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে ‘কুক্ষিগত করতে’ অনেক কিছু করেছে অভিযোগ এনে মঈন খান বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে না পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সেজন্য আমরা ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।
সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে ৩/৪ মাসের বেশি সময় লাগবে না জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচন সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার, এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচেনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে, পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনী কোনো স্টেক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে আগে যুক্ত ছিল বা থাকতে পারে, তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। বাস্তবে যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার ‘গণনা’ করা তারপরে নির্বাচনের কাজ; অফিসার নিয়োগ, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে বাস্তবে ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।
তত্বাবধায়ক সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য মনে করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারের মূল্য আছে বা হবে। এটাই ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার সবচাইতে বড় বাধার একটা। সীমাবদ্ধতা, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা, এসব হচ্ছে উপসর্গ। তত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না।