ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। কিন্তু ‘সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮ ফ্লাইটটি’ উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় অনেকে বলছেন বিদ্রোহীদের গুলিতে প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে এতথ্য নিশ্চিত বা যাচাই করতে পারেনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা যখন রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করছেন, সে সময় দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে একটি ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজ আকাশে উড়াল দেয়।
‘সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮ ফ্লাইটটি’ দামেস্ক থেকে উড়াল দেওয়া সর্বশেষ ফ্লাইট বলে জানিয়েছে ফ্লাইটরাডার ২৪। ফ্লাইটরাডার ২৪–এর তথ্যানুযায়ী, দামেস্ক থেকে ছাড়া ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজটি প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে পরে ইউ–টার্ন নিয়ে উড়ে যেতে শুরু করে এবং কয়েক মিনিট পর সেটি মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য হওয়ার সময় উড়োজাহাজটি হোমসের ওপর ছিল বলে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
ওই উড়োজাহাজে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ছিলেন কি না, রয়টার্স তা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, রোববার স্থানীয় সময় ভোরে উড়োজাহাজে দামেস্ক ছেড়েছেন আসাদ। তখন তারা বলেছিলেন, আসাদের গন্তব্যে কোথায়, তা তারা জানেন না।
দামেস্ক বিমানবন্দর এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আসাদ সিরিয়া ছেড়ে গেছেন বলে জানানো হয়েছে।
বিদ্রোহীরা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঠিক আগে বাশার আল-আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে। সূত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহীদের গুলিতে আসাদের প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে হিন্দুস্তান টাইমস খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশকিছু ভিডিওতে একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এটি আসাদকে বহনকারী প্লেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এই দাবিগুলো কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে নিশ্চিত বা যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে, বিদ্রোহীরা উত্তর সিরিয়ার বড় অংশ দখল করার পরপরই বাশার আল-আসাদের পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যায়। ক্রেমলিনের একটি সূত্র ব্লুমবার্গকে এই তথ্য নিশ্চিত করে। তারা জানায় আসাদকে রক্ষা করার কোনো পরিকল্পনা মস্কোর নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন আসাদের সৈন্যদের পিছু হটার ঘটনায় বিরক্ত।
আমেরিকা অবশ্য প্রকাশ্যে সিরিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি খুব খারাপ। ওরা আমাদের বন্ধু নয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আমেরিকার কিছু করার নেই। এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। ওখানে যা হচ্ছে, হোক। আমরা এর মধ্যে নাক গলাব না।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে আমেরিকা। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালে ঘৌটার হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বহু শিশু। ২০১৭ সালের হামলাতেও মৃত্যু হয় শতাধিক সিরিয়ান নাগরিকের। জাতিসংঘের একাধিক দল সিরিয়ায় গিয়ে নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি।
কাফি