অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছে আল-আসাদ পরিবার। সামরিক কর্মকর্তা থেকে ১৯৭১ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট হন হাফেজ আল-আসাদ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিরিয়া শাসন করেছিলেন। ২০০০ সালের জুনে মারা যান তিনি। তার কাছ থেকে সে বছরের জুলাইয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা পান চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র ও ছেলে বাশার আল-আসাদ।
একইসঙ্গে, বাথ পার্টির নেতা এবং সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাশার আল-আসাদ। এর ১১ বছর পর যখন সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। বাশার আল-আসাদ কঠোর দমন-পীড়নের মাধ্যমে এর জবাব দেন। আরো বেশি সিরীয় জনগণ বিক্ষোভে যোগ দেয়। বাশার তখন তার বিরোধীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে দমন-পীড়ন আরো বাড়াতে থাকেন, যা শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।
এরপরের বছরগুলোতে নিহত হন সিরিয়ার কয়েক লাখ মানুষ। বাশার আল-আসাদকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়। অনেকটা যুদ্ধের বাতাবরণেই তিনি সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন। তবে সেসব নির্বাচন অনেকের কাছেই অগণতান্ত্রিক বলে অগ্রহণযোগ্যই থেকে যায়।
যুদ্ধ কখনোই জিততে না পারলেও, বাশার আল-আসাদ তার অনুসারীদের সমর্থন এবং সংখ্যালঘু আলাওয়ি রাজনৈতিক দলের সহায়তায় সংকীর্ণভাবে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া আসাদ বিরোধী আন্দোলন মাঝে স্তিমিত হয়ে এলেও চলতি বছর গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিদ্রোহীরা নতুন করে আক্রমণ শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আলেপ্পো, হামা, হোমস জয়ের পর দ্রুতই রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হয় বিদ্রোহী এইচটিএস। তাদের আক্রমণ শুরু হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা।
বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের গভীর ক্ষত এখনো দৃশ্যমান দেশটিতে। তাই সিরিয়া এখনো মতাদর্শগত কারণে অনেকাংশেই বিভক্ত। গত চার বছর ধরে চলা অচলাবস্থা এবং স্থিতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীদের কঠোর আঘাতে ভেঙে পড়তে শুরু করে বাশারের প্রতিরোধব্যুহ। বিদ্রোহীদের হঠাৎ আঘাতে আসাদ বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
আরব নেতাদের মধ্যে একঘরে থাকার অবস্থান থেকে বাশার বেরিয়ে এলেও গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি কার্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনা বা বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি তার আমলে। বরং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার দিকে তার কেন্দ্রীভূত মনোযোগে পুঞ্জিভূত হয়েছে জনগণের ক্ষোভ। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে আলেপ্পো বা দামেস্কের রাজপথে জনগণের উল্লাসে।
কাফি