প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার অনলাইন বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে আসলে কমিশনের মৌখিক নির্দেশনায় তা সমন্বয় করেছে ডিএসই। তবে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে ডিএসইর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেদের ব্যক্তিগত ফায়দা লুটে নিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম এবং ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য ও কোম্পানিগুলোর মুল্যসংবেদনশীল তথ্য কোম্পানিগুলো জমা দেওয়ার অনেক পরে প্রকাশ করার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। একদিন পরেই ফ্লোরপ্রাইস সমন্বয়য়ে যে ব্যবস্থা নেওয়া হলো এটাই কি শেষ, ডিএসই কর্মকর্তারা কি দায়মুক্ত হয়ে গেলেন? এমন প্রশ্ন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের।
ডিএসই বেক্সিমকোর শেয়ারের বোনাস লভ্যাংশ সমন্বয় করার পর আজ বুধবার শেয়ারটির নতুন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ১১০ টাকা ১০ পয়সায়।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের নীতিমালা জারির পর তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস সেভাবেই সংশোধন হলেও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘন হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করলেও নিশ্চুপ ছিলো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।
নীতিমালা অনুযায়ী লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পরবর্তী কার্যদিবসে শেয়ারদরের সঙ্গে বোনাস শেয়ারের সমন্বয় করে নতুন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের কথা। কিন্তু বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়ই হয়নি। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেটের আগের সর্বনিম্ন দর ছিল ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবে কোম্পানিটির ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হওয়ার কথা ১১০ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু সেটির কোনো পরিবর্তন না করায় রেকর্ড ডেটের পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস গতকাল ১১৫ টাকা ৬০ পয়সাতেই অপরিবর্তিত ছিলো। সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধি দেখিয়ে গেইনার তালিকায় উঠে আসে কোম্পানিটি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোর প্রাইস বিবেচনা করে অনেক বিনিয়োগকারী সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। বোনাস ও রাইটের পর সেই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কত হবে সেটি বিএসইসির নীতিমালা অনুযায়ীই হিসাব করে পরবর্তীতে আবার বিনিয়োগ হবে। কিন্তু সেই হিসাব যদি ডিএসইর কারণে গড়মিল হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবিষয়ে বিএসইসি যেহেতু একটা নীতিমালা দিয়েছে সেহেতু সে অনুযায়ীই হওয়া উচিত। ডিএসইর আগের নিয়ম থাকলেও সেটি বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
এবিষয়ে জানতে ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সফিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, পূর্বের কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লোরপ্রাইসে থাকা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যখন বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু করে তখন সেই কোম্পানির শেয়ার দর সমন্বয় হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস সেভাবেই সংশোধন হওয়ার কথা ছিলো। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ কোন নিয়মে সমন্বয় করেছে বা না করে থাকলে কেনো করেনি তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি গতকালকেই কমিশনের নজরে এসেছে। আর তখনি বিএসইসি থেকে স্টক এক্সচেঞ্জকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এটির সমাধাণ করতে। সেই অনুযায়ী আজ বেক্সিমকোর ফ্লোরপ্রাইস সমন্বয় করা হয়েছে। তবে কমিশন থেকে আরও তদন্ত করে দেখবে, এতে স্টক এক্সচেঞ্জের কারো গাফিলতি থাকলে বা জড়িতর প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেই অনুযায়ী, আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) বোনাস শেয়ার সমন্বয় করে নতুন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের ফ্লোর প্রাইসের থেকে ৫.৭৬ কম প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ইতোমধ্যে ২৬ নভেম্বর বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় করেছে। সিএসইতে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে ১১০ টাকা ২০ পয়সায়।
এসএম