ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

বেক্সিমকোর শেয়ারে ফ্লোরপ্রাইস নীতিমালা লঙ্ঘন, নিশ্চুপ ডিএসই-বিএসইসি

পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের নীতিমালা জারির পর তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস সেভাবেই সংশোধন হলেও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করলেও নজর নেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।

নীতিমালা অনুযায়ী লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পরবর্তী কার্যদিবসে শেয়ারদরের সঙ্গে বোনাস শেয়ারের সমন্বয় করে নতুন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের কথা। কিন্তু বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়ই হয়নি। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেটের আগের সর্বনিম্ন দর ছিল ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবে কোম্পানিটির ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হওয়ার কথা ১১০ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু সেটির কোনো পরিবর্তন না করায় এখনও ১১৫ টাকা ৬০ পয়সাতেই অপরিবর্তিত আছে। তবে ৫ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধি দেখিয়ে গেইনার তালিকায় উঠে এসেছে কোম্পানিটি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোর প্রাইস বিবেচনা করে অনেক বিনিয়োগকারী সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। বোনাস ও রাইটের পর সেই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কত হবে সেটি বিএসইসির নীতিমালা অনুযায়ীই হিসাব করে পরবর্তীতে আবার বিনিয়োগ হবে। কিন্তু সেই হিসাব যদি ডিএসইর কারণে গড়মিল হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবিষয়ে বিএসইসি যেহেতু একটা নীতিমালা দিয়েছে সেহেতু সে অনুযায়ীই হওয়া উচিত। ডিএসইর আগের নিয়ম থাকলেও সেটি বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

এবিষয়ে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, পূর্বের কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লোরপ্রাইসে থাকা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যখন বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু করে তখন সেই কোম্পানির শেয়ার দর সমন্বয় হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস সেভাবেই সংশোধন হওয়ার কথা ছিলো। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ কোন নিয়মে সমন্বয় করেছে বা না করে থাকলে কেনো করেনি তা যাচাই-বাছাই করা হবে। সেই সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে বলেন, বেক্সিমকোর শেয়ার ফ্লোরপ্রাইসে আছে। যেহেতু কোম্পানিটি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে, সেহেতু ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ে কোম্পানির ফ্লোরপ্রাইস ১১০ টাকা ১০ পয়সা হওয়ার কথা। তবে এটি আমাদের ভুল সেটা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটি সংশোধন করা হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইসের নিচে লেনদেন হবে না কোম্পানির শেয়ার। এমনকি প্রতিটি কোম্পানির যে সার্কিট ব্রেকার দেয়া থাকে, কোনো কোম্পানি যদি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়ে থাকে তাহলে সে কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের কারণে সর্বোচ্চ দরে বাড়তে পারবে, কিন্তু কমতে পারবে না।

জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যখন বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু করে তখন সেই কোম্পানির শেয়ার দর সমন্বয় হয়ে থাকে। সমন্বয় করা দর নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইসের কম হলে পরিবর্তন করা হয় সেই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। এটি সংশোধন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা। আবার সমন্বয় দর ফ্লোর প্রাইসের বেশি হলে আগের ফ্লোর প্রাইসই বহাল থাকে। এতে লোকসান হয় বিনিয়োগকারীদের। এভাবেই নির্ধারিত হয়ে আসছিল কোম্পানির সংশোধিত ফ্লোর প্রাইস।

এমন অবস্থায় বিএসইসির ৭৬১তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কোনো কোম্পানি বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু করলে রেকর্ড ডেটের আগের সর্বনিম্ন দরের সঙ্গে সমন্বয় হয়ে পরিবর্তন হবে সেই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। তবে বিএসইসির এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।

ফলে বিএসইসির এই নতুন নিয়মে ফ্লোর প্রাইস বিবেচনা করে যারা শেয়ার কিনছেন তারা হিসাব মেলাতে পারছেন না। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিএসইসি ৭৬১তম সভায় ফ্লোর প্রাইস সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত বোনাস বা রাইট শেয়ারের রেকর্ড ডেটের পরবর্তী সর্বনিম্ন দরকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সংশোধিত ফ্লোর প্রাইস হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

এ হিসেবেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের (বিএটিবিসি) সংশোধিত ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৫১৮ টাকা। বিএটিবিসি তার শেয়ারধারীদের জন্য নগদের পাশাপাশি ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। রেকর্ড ডেটের আগে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১ হাজার ৫৫৪ টাকা। বিএসইসির নির্দেশনার পর এটাই ছিল প্রথম ফ্লোর প্রাইস সংশোধন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য কোম্পানিগুলো, যারা বোনাস ও রাইট শেয়ার ইস্যু করবে তাদের ক্ষেত্রে এভাবেই ফ্লোর প্রাইস সংশোধন করা হবে বলে জানানো হয়।

কিন্তু বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেটের আগের সর্বনিম্ন দর ছিল ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবে কোম্পানিটির ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হওয়ার কথা ১১০ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু সেটির কোনো পরিবর্তন না করায় এখনও ১১৫ টাকা ৬০ পয়সাতেই অপরিবর্তিত আছে। তবে ৫ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধি দেখিয়ে গেইনার তালিকায় উঠে এসেছে কোম্পানিটি।

এর আগে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রেকর্ড ডেটের পর ফ্লোর প্রাইস পুনর্নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে ডিএসই।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার