সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়। তবে উন্নয়নের নামে এসব প্রকল্পে লুটপাটের মহোৎসব করেন দীপু মনি ও তার ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু। ভাই-বোনের লোভের বলি হয়ে ভেস্তে যায় মেঘা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। তাতে উন্নয়নের নামে অন্ধ করে রাখা চাঁদপুর জেলাবাসী পিছিয়ে রইলো।
জানা যায়, চাঁদপুর শহরের ইসলামপুর গাছতলা গ্রামে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থাপনা নির্মাণের জন্য সরকার ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দীপু মনির লোকজন ভূমি অধিগ্রহণের নামে সেখানে লুটপাটের নেশায় মেতে ওঠেন। এ কারণে গত ৫/৬ বছরেও চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। ফেরত গেছে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ। এমনকি এসব প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের নামে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে দীপু মনি গংদের নামে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু হয়। ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ৩-৪টি কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু। অল্প জায়গায় মারাক্তকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। একই সাথে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ইন্টানি করছেন। কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাবে মেডিকেল কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হলেও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এদিকে ইসলামপুর গাছতলা গ্রামে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জন্য প্রস্তাবিত প্রায় ৩০ একর ভূমির মালিকরা কয়েক বছর ওই জমিতে ফসল করতে পারেনি। ভূমি অধিগ্রহণের আশঙ্কায় ফসলি জমি রয়েছে অনাবাদী। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি ও ভাই টিপুসহ স্বজনরা। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই মেঘনা নদী পাড়ে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন টিপু ও তার নিকট আত্মীয়রা। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমি জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে। অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে বাতিল করা হয়। নানা অনিয়ম ও অভিযোগের কারণে বাতিল হলেও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির চাপে তা গোপন রাখা হয়। এসব কারণে সহসাই আর হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। এদিকে জবরদখলকৃত সেই ভূমি ফেরত চাইছেন জমির মালিকরা। অন্যদিকে চাঁবিপ্রবি’র দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি শিক্ষার্থীদের।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিন বিভাগের দুই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০ জন। চাঁদপুর শহরের ওয়াপদাগেট খলিশাডুলি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিন্স মাহমুদ বলেন, নিজস্ব ভবন না থাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আবাসিক হল, খেলাধুলার মাঠ নেই। নিজস্ব আবাসিক হল না থাকায় মেয়েদের বেশি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
জাপানি অর্থায়নে চাঁদপুর মেঘনার চরে বেসরকারিভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রকল্প অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, এ আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের পিছু হটাতে বাধ্য করেন দীপু মনি গং। ফলে ৬ হাজার কোটি টাকার বড় একটা বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় চাঁদপুরে পর্যটন শিল্পে হতাশা নেমে আসে। ২০ হাজার মানুষের একসাথে অবকাশ যাপনের সুবিধা সম্বলিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো। শুধুমাত্র মেঘনা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ ইনকাম নিরবিচ্ছিন্ন রাখতেই বালু সিন্ডিকেটের কাছে বলি হয় এ প্রকল্পটি। এসব অপকর্মের মূলহোতা ছিলেন দীপু মনির বড় ভাই ওয়াদুদ টিপু।
এমআই