অর্থনীতি
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে এস আলমের ১৮ কোম্পানি!

কর স্বর্গ ও গোপন (শেল) কোম্পানি খোলার অন্যতম কেন্দ্র বলে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে বাংলাদেশের বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস. আলমের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সন্ধান মিলেছে। এই গ্রুপের অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তকারীদের মতে, ২০১১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে – ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে – মূলত অর্থপাচারের উদ্দেশ্যে ১৮টি গোপন কোম্পানি খুলেছেন এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদ। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতিও নেননি তিনি।
২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতন হয়। এরপর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এস আলমসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত দুর্নীতি ও আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা আরও জোরদার করার মধ্যে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। গত ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সাথে জড়িত সন্দেহে ১৫০ ব্যক্তির একটি তালিকা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৯ জনের বিষয়ে এরমধ্যেই তদন্ত করা হচ্ছে।
এর কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া সম্পদ ফেরানোর প্রাথমিক কাজ এরমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘তবে জাল ফেলা হয়েছে, এখন গোটানো বাকি।’
এই প্রচেষ্টার সাথে জড়িত টাস্কফোর্সের একজন সদস্য জানান, পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়সংকল্প, যেকারণে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে এস আলমের বিনিয়োগের খোঁজ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকখাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এরমধ্যে কেবল এস আলম-ই অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।
সম্পদ উদ্ধারে দরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকখাতকে ধবংস করার জন্য দায়ী দুজন ব্যবসায়ী – এস আলম ও সালমান এফ রহমান। বিগত সরকারও যেখানে মূল ভূমিকা রেখেছে।
“গভর্নর বলেছেন, কেবল এস আলমই ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে। সিঙ্গাপুর-সহ যেসব দেশে অর্থপাচার হয়েছে, ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়ে— সেসব দেশের সরকারের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে” – বলেন তিনি।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে এস আলম গ্রুপের বিপুল বিনিয়োগের কথা জানা যাচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন যে, “এই প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ, এবং তাতে অনেক বছর লাগতে পারে। এরমধ্যে আগামী নির্বাচনে হওয়া যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনও বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষত অর্থপাচারের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচিত সরকারের সাথে আঁতাত করে তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টাও হয়তো করবে।”
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ পুনরুদ্ধারে গত ১৯ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স। বৈঠকে এস আলম-সহ অন্যান্য শিল্পগোষ্ঠীর বৈদেশিক সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। টাস্কফোর্সের সঙ্গে কাজ করা দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ভার্জিন আইল্যান্ডসে এস আলমের যেসব কোম্পানি
টাস্কফোর্সের সূত্রমতে, ২০১১ সালে প্রথম এস আলমের নামে ক্যানালি লজিস্টিকস পিটিই লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গঠন করা হয় ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে। এরপর এস আলমের মালিকানায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০টি কোম্পানি খোলা হয়। এগুলো হলো – হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রেইলস ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, হ্যামিলটন ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, লিভোনিয়া পিটিই লিমিটেড, লু শুই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, পিটসডেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, স্পিংফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, চিং শুই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড এবং ট্রিভোলি ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড।
এছাড়া, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আরও ছয়টি কোম্পানি গঠন করা হয়। এগুলো হলো – আদাইর ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, গ্রিনিচ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, লিনিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, ম্যারিকো ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, ওয়েভপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড এবং জেনিতা ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড।
এছাড়া, ২০১৯ সালের ২২ মে তারিখে এস আলমের মালিকানায় পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিংস লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানি গঠিত হয়।
হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাইফুল আলমের নামে, বাকি ৩০ শতাংশের মালিক তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন।
বিদেশে বিনিয়োগ করতে হলে, যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি বা সংস্থাকে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। এস আলম গ্রুপকে এধরনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
২০১৭ সালে ফাঁস হওয়া প্যারাডাইস পেপারে বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ পাচারের তথ্য উঠে আসে, যেখানে কর স্বর্গ হিসেবে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের দিকেও আলোকপাত করা হয়।
সিঙ্গাপুর থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি সেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক কর সুবিধা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে কোনোপ্রকার আয়কর, বাণিজ্যিক কর, বা মূলধনী আয়ের ওপর কর না থাকা। এছাড়া, বিনিয়োগকারীর গোপনীয়তার অধিকারও দেয় সেখানকার কর্তৃপক্ষ, যার ফলে প্রকাশ্যে তাদের শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের নাম আনুষ্ঠানিক নথিতে প্রকাশ না করেও সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে বিভিন্ন কোম্পানি।
কর স্বর্গের ব্যবহার হয় কেন?
অর্থপাচার ও নানান ধরনের দুর্নীতির জন্য খোলা হয় শেল বা গোপন কোম্পানি। করফাঁকি এবং আয়ের উৎস গোপন করতে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা কর স্বর্গ বা ট্যাক্স হ্যাভেন বলে পরিচিত বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এসব প্রতিষ্ঠান খুলে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যূনতম কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সম্পদ ধারণ বা তা লেনদেনের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তর করতে শেল কোম্পানি খোলা হয়, যাদের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে কর স্বর্গগুলো। কারণ সেখানে কর যেমন স্বল্প, তেমনি আইন ও বিধিমালাও শিথিল। পায় গোপনীয়তা রক্ষার সুবিধাও। কর সুবিধা লাভ এবং গোপন কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জনপ্রিয় কয়েকটি কর স্বর্গের মধ্যে নাম করা যায় – কেম্যান আইল্যান্ডস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বারমুডা ও চ্যানেল আইনল্যান্ডস এর।
ইন্টারন্যাশল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এর এক অনুসন্ধানে এসব কর স্বর্গের ব্যাপক সুবিধা গ্রহণের চিত্র উঠে এসেছে। বিভিন্ন শেল কোম্পানি ব্যবহার করে কীভাবে কর ফাঁকি দেওয়া, অর্থ পাচার ও প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখা হচ্ছে তা-ও উঠে আসে এতে।
সম্পদ ফিরিয়ে আনা কঠিন, তবে সম্ভব
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)- এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তাঁদের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ– বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে নিশ্চয় প্রমাণ আছে যে অর্থপাচার হয়েছে, কারণ তারাও জড়িত ছিল। “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব না, তবে এটি জটিল ও দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া।”
তিনি বলেন, প্রথমে এটা আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে এস আলমের কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন করা হয়েছে। “এটাকে পাচার হওয়া টাকা বললেও– আইনিভাবে প্রমাণ না করতে পারলে, কোনো দেশই তা ফেরত দেবে না। তবে একবার আইনিভাবে প্রমাণ করা গেলে– সম্পদ ফিরিয়ে আনতে তখন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা যাবে।”
এই লক্ষ্য অর্জনে বিএফআইইউ, দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় – গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচটি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিদেশে এস আলমের যেসব সম্পদ
২০০৯ সাল থেকে গত এক দশকে এস আলম নিজের এবং তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন কোম্পানি স্থাপন করে সিঙ্গাপুরে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে শুরু করেন।
সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, এস আলম একটি শপিং মলে ৩টি হোটেল ও রিটেইল স্পেস কেনার জন্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার (বর্তমান ডলারমূল্যে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সমান) বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন গোপনীয় নথি অনুযায়ী দেখা যায়, ভুয়া কগজে প্রতিষ্ঠান খুলে নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে দেশের প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন এই এস. আলম।
এসব ঋণের অর্থ শত শত আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মোড়কে এলসির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএফআইইউয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রেগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
এমআই

অর্থনীতি
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব তলব

ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী পরিচালিত দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সোমবার (১৪ জুলাই) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো এক চিঠিতে বিএফআইইউ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, তার স্ত্রী মার্জিনা বেগম, দুই পুত্র—জুন্নুন সাফওয়ান ও জুনায়েদ জুলকার নাঈম এবং কন্যা তাসমিয়া তারান্নুম নাওমির নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নামে চালু থাকা ব্যাংক হিসাব, হিসাব খোলার ফরম, হালনাগাদ বিবরণী, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, লকার, ক্রেডিট কার্ড, স্টুডেন্ট ফাইল, প্রি-পেইড কার্ড, গিফট কার্ডসহ পাঁচ লাখ টাকা বা তার অধিক লেনদেনের যাবতীয় ভাউচার আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
বিএফআইইউর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, লেনদেন তলবের এ নির্দেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী কার্যকর হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়লে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট ব্যাংকটির নতুন পর্ষদ গঠন করে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানেই ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং তার আগে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সোনালী ব্যাংক থেকে অবসরের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে তিনি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে তার অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েন। এ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে বলেও ব্যাংকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাদের মধ্যে একটি পক্ষ বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপকে বাঁচাতে কাজ করছে; তাদের সমর্থন দিচ্ছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হলেন আক্তার হোসেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। সোমবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তার দায়িত্ব ও কর্মপরিধি নির্ধারিত হবে।
চিফ ইকোনমিস্ট বা প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পরিচালনা পর্ষদকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, মুদ্রানীতি এবং ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বিষয়ে নীতিগত পরামর্শ দেবেন। এই পদটি অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধান অর্থনীতিবিদ পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফয়সাল আহমেদ। এরপর গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তর থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম প্রধান অর্থনীতিবিদ।
পরবর্তীসময় ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে প্রধান অর্থনীতিবিদের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে।
অর্থনীতি
১৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৪ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে ১১৯ কোটি ৪০ লাখ (১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের মুদ্রায় এর পরিমাণ (১ ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে গতকাল রোববার (১৩ জুলাই) একদিনেই এসেছে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১৪৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সোমবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে ১১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৩ দিন) ছিল ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি এসেছে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৬০১ কোটি টাকা।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার ১১৪৭ কোটি টাকা। এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
গত মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চে রেমিট্যান্স আসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স আসে। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে রেমিট্যান্স আসে ২৮২ কোটি ডলারের।
অর্থনীতি
রিটার্ন জমা দেননি টিআইএনধারী ৭২ লাখ করদাতা

ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৭২ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর রিটার্ন দাখিল করলেও ৩০ লাখ করদাতা কোনো আয়কর পরিশোধ করেননি।
সোমবার (১৪ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আয়কর বিভাগের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সভায় আয়কর বিভাগের সদস্য, ঢাকার কমিশনার ও মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান কর অঞ্চলভিত্তিক বকেয়া আদায়ের অগ্রগতি জানতে চান এবং বকেয়া কর আদায়ে বাধা থাকলে তা নিরসনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অডিট সিলেকশনে কোনো ধরনের মানবীয় হস্তক্ষেপ থাকবে না। পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হবে। অডিটের মূল উদ্দেশ্য কর আদায় নয় বরং কর ফাঁকি রোধ এবং কর সংস্কৃতি উন্নয়ন।
তিনি বলেন, আয়কর আদায় বাড়াতে হলে টিআইএনধারী ৭২ লাখ রিটার্ন না দেওয়া করদাতা এবং আয়কর দাখিল করেও যারা পরিশোধ করেননি এমন ৩০ লাখ করদাতাকে লক্ষ্য করে কাজ করতে হবে। সব মিলিয়ে এক কোটি করদাতার কাছ থেকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করলেই আয়কর খাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণে আয়করের অংশ বাড়ানো ছাড়া ন্যায্য সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ সংগ্রহ সম্ভব নয়। অথচ আয়কর খাতের আদায়ের হার গত অর্থবছরে কমেছে, যা হতাশাজনক।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে জরিপ কার্যক্রম ও স্পট অ্যাসেসমেন্ট আরও জোরদার করার নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ে জনবল ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
অর্থনীতি
জেট ফুয়েলের দাম বাড়লো

বিমানে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সোমবার (১৪ জুলাই) নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি লিটারে ৯৩ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯৮ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে প্রতি লিটার ০.৬০৬৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে ০.৬৪০১ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ২০ জানুয়ারি এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জেট এ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল) বিপণনে তাদের বিপণন চার্জ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনে জমা দিয়েছে।
এই প্রস্তাব দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ডিউটি ফ্রি (শুল্ক ও মূসকমুক্ত) এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য শুল্ক ও মূসকসহ জেট এ-১ এর মূল্যহার নির্ধারণের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে।