দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদকে আটক করতে পুলিশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা নিকুঞ্জে ডিএসইতে যায় মশিউর সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিযোগ ডিএসইর সিআরওর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ১৬১ কোটি টাকা হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই ভবনে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মশিউর সিকিউরিটিজ কাণ্ডে খায়রুল বাশারকে শোকজ করে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। খায়রুল বাশারের ব্যর্থতায় বিনিয়োগকারীদের ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মশিউর সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি (সিসিএ) ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার বিক্রি করে নিয়েছে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে একক কোনো ব্রোকারেজ হাউজের এটিই সবচেয়ে বড় জালিয়াতি।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ৬ থেকে ৭ জন বিনিয়োগকারী আজ সোমবার নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই ভবনে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা সিআরও বাশারকে আটকের চেষ্টা করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা জানান, বাশারের কারনেই আজকে তাদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। সে যদি ঘুষ খেয়ে ব্রোকারেজ হাউজটিতে তদন্ত বন্ধ না করতো বা সঠিক তদন্ত রিপোর্ট দিত, তাহলে হাউজটির কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদের টাকা মেরে দিতে পারতো না। তার এই কাজে সহযোগিতা করেছেন ডিএসইর কয়েকজন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা। তাই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির দায়ভার বাশারদের নিতে হবে। তাদের মতো দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের ডিএসইতে থাকার কোন যোগ্যতা নেই। তারা যতদিন ডিএসইতে থাকবে, ততদিন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাত্তিক আহমেদ শাহ অর্থসংবাদকে বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত। হাউজটির ক্ষতিগ্রস্থ কিছু বিনিয়োগকারী পুলিশ নিয়ে ডিএসইতে এসেছিলেন। তারা সিআরও বাশারসহ কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া কিছু প্রমাণাদি দিয়েছেন। তবে বিষয়গুলো আমার জানা নেই। এ বিষয়ে পর্ষদে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিনিয়োগকারীরা পুলিশের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে ডিএসইর সিএফও বলেন, মনে হয় না করেছে। তবে পুলিশ হয়তো কারও অনুরোধে ডিএসইতে এসেছিলেন। তবে তারা কিছু বলেননি।
এদিকে, খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারের অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক প্রভাবশালী কমিশনার শামসুদ্দীন আহমেদের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় ডিএসইর সিআরওর অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেননি খোদ ডিএসইর কর্মকর্তারা। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএসইসির কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ পদ হারালেও ডিএসই সিআরও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে মশিউর সিকিউরিটিজের ব্যাপারে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বর্তমান কমিশন। এর মধ্যে আছে মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, ‘ফ্রি লিমিট’সহ দেওয়া সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা, পরিচালকদের ব্যাংক ও বিও হিসাব স্থগিত এবং জড়িত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশ থেকে পালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ। এছাড়া তদন্তের পর আইন অনুসারে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাফি