অন্তর্বর্তী সরকারের আরও তিন নতুন উপদেষ্টা গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়া তিন উপদেষ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এরই মধ্যে সেখ বশিরকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে- তিনি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলিতে নিহত এক যুবকের হত্যা মামলার আসামি।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে মিলে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামেরও আংশিক মিল রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কি না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তার নামে হয়েছে কি না।
জানা যায়, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মহিলা কলেজ সড়কের বাসিন্দা মোছা. সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে তার ছেলে সোহান শাহ নিহতের ঘটনায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। এতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।
মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মামলার ৪৮ নম্বরে আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সোহান। এর ৩৯ দিন পর ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এদিকে গতকাল শপথ নেওয়ার পর আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে প্রথম কর্মদিবসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন।
এ সময় তার নামে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মামলার আসামি কি না সঠিক জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।
নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি ছাত্র আন্দোলনের চেতনার সঙ্গেই ছিলাম। সামনে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে কাজ করব। মানুষের কষ্ট আমি বুঝি। নতুন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।
সেখ বশির উদ্দিন বলেন, মুদ্রাস্ফীতির ফলে আমাদের টাকার অঙ্ক যেটা বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি, বরং ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আমরা যদি একজন শ্রমিকের দিকে দেখি তাহলে তার জীবনমানের মধ্যে কম্প্রোমাইজ চলে এসেছে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনাদের কাছে কোনো ম্যাজিক প্রত্যাশা করছি না। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব। আপনারা আমাকে সহযোগী হিসেবে পাবেন। আপনাদের কাজকে আরও কার্যকর করার জন্য ইনসাফের সঙ্গে আমার সক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করব।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ নেন সেখ বশির উদ্দিন। পরে তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া বাকি দুজন হলেন- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও মো. মাহফুজ আলম।
এদিকে শপথগ্রহণের পরেই বঙ্গভবনের সামনে সেখ বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মশাল মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জানান, সেখ বশির উদ্দিন আওয়ামী লীগের দোসর। তাকে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা দেওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে। তাই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সেখ বশিরকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তারা।