ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

ডিএসই ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের দ্বন্দে দেড় মাসে ৩ বার ক্যাটাগরি পরিবর্তন

পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণের তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশা। এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের সঙ্গে কোম্পানির দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে। লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত জটিলতায় গত দেড় মাসের মধ্যে তিন বার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেছে ডিএসই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোম্পানিটির সাধারণ বিনিয়োগকারী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের ক্যাটাগরি একাধিকবার পরিবর্তন করেছে ডিএসই। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়। তবে এক মাস না যেতেই লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন হয়নি জানিয়ে আবারও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠিয়েছে ডিএসই। কোম্পানির সঙ্গে ডিএসইর সিআরও এর দ্বন্দে এমন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারী।

ডিএসই সূত্র মতে, গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৩ সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন না করায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়। এর একমাস না যেতেই গত ২১ অক্টোবর লভ্যাংশ বণ্টন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে কোম্পানির শেয়ার ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়। তবে আজ ১০ নভেম্বর ডিএসই জানায় কোম্পানিটি ঘোষিত লভ্যাংশ এখনো বিনিয়োগকারীদের পাঠায়নি। ফলে আজ আবারও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠায় ডিএসই।

এবিষয়ে রবিবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব শাফকাত মওলা অর্থসংবাদকে বলেন, ঘোষিত লভ্যাংশ পাঠানো হয়েছে। সেই তথ্য পেয়েই ‘এ’ ক্যাটাগরিতে পাঠিয়েছিলো ডিএসই। তবে আজ আবারও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠিয়েছে ডিএসই। লভ্যাংশ পাঠানো হয়েছে তবে ব্যাংক সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সময়ে ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাশারের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। হতে পারে এ জন্য।

এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান বলেন, এবিষয়টি রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট (আরএডি) দেখাশোনা করে। এ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ তাদের হাতে।

এ ব্যাপারে জানতে ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে এবিষয়ে তার মন্তব্যে জানা সম্ভব হয়নি।

ডিএসইর সিআরও খায়রুল বাশারের সাড়া না পাওয়া এটা নতুন কিছু নয়। অভিযোগ রয়েছে, ডিএসইর কারিগরি ত্রুটি বা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদসহ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও বেশি ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য দেওয়া এবং জানতে চাইলে সঠিক তথ্য না দিতে পারাই ডিএসইর কর্মকর্তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ডিএসইর বর্তমান সিআরওর বিরুদ্ধে। এছাড়াও খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারের অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক প্রভাবশালী কমিশনার শামসুদ্দীন আহমেদের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় ডিএসইর সিআরওর অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেননি খোদ ডিএসইর কর্মকর্তারা। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএসইসির কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ পদ হারালেও ডিএসই সিআরও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

এবিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্যাটাগরি পরিবর্তন সংক্রান্ত নোটিশ বিএসইসি থেকে জারি করা আছে। যেসব কোম্পানি অনুমোদিত লভ্যাংশের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ বিতরণ নিশ্চিত করেছে, সেসব কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরি হতে প্রযোজ্য ক্যাটাগরিতে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। নোটিশ অনুযায়ী ক্যাটাগরি পরিবর্তনের ক্ষমতা ডিএসইর হাতে। তবে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ক্যাটাগরি একাধিকবার কেন পরিবর্তন করা হয়েছে সেটা ডিএসই বলতে পারবে।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার