চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, সিএসই বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাজটি করছে। এজন্য প্রয়োজনীয় তিনটি অংশ রেগুলেটরি, কারিগরি এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট। এর মধ্যে রেগুলেটরি এবং কারিগরি অংশের কাজ শেষের দিকে, তৃতীয় অংশ মার্কেট ডেভেলপমেন্ট, সেটাও চলমান।
শনিবার (২ নভেম্বর) সিএসইর প্রধান কার্যালয়ে প্রথমবারের মত দুই দিনব্যাপী কমোডিটি ডেরিভেটিভস বিষয়ক সার্টিফিকেট প্রশিক্ষনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় সিএসই এবং ডিএসইর ট্রেকের প্রতিনিধিগণের পাশাপাশি সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, পরিচালক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এমসিএক্স (মালটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্টে এন্ড হেড অব রিসার্চ দেবজ্যোতি দে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, সিএসই বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাজটি করছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় তিনটি অংশের মধ্যে রেগুলেটরি এবং কারিগরি অংশের কাজ শেষের দিকে, তৃতীয় অংশ মার্কেট ডেভেলপমেন্ট- সেটাও চলমান। তারই ধারাবাহিকতায় সিএসই বেশ কিছু সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে আজকের এই সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানটি নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের তিনটি উদ্দেশ্য থাকে- নিজের দক্ষতাকে আরও উন্নিত করা, জ্ঞানকে বর্ধিত করা এবং এটিচুউড পরিবর্তন করা। আজকের এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনারা যেমন ট্র্যাডিশনাল মার্কেট এবং কমোডিটি মার্কেটের পার্থক্য বুঝতে পারবেন, তেমনি নতুন মার্কেটে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবেন। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে এই প্রশিক্ষন কার্যক্রমগুলিকে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের যুক্ত করে আরও প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তোলা।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যারা আজকের এই প্রশিক্ষন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন, আমরা আশা করবো আপনারাই হবেন কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম সারিতে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দরভাবে এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো। এর মাধ্যমে আমরা একটি গতিশীল পুঁজিবাজারও গঠন করতে পারবো ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএসইর পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাংলাদেশ কোটি কোটি মানুষের দেশ এবং বিপুল সম্ভাবনাময়। অথচ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার দিক থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল বা পাকিস্তান থেকে এখনো পিছিয়ে আছে। আজ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ থাকলে পন্যের সঠিক এবং যৌক্তিক মূল্য পাওয়া যেত এবং মূল্যের এত উঠানামা হত না। এতে করে ভোক্তা থেকে উৎপাদনকারী সবাই উপকৃত হত। কাজেই আমাদের অর্থনীতির জন্য এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠা এবং এর কার্যক্রম শুরু করা অতীব জরুরি।
তিনি বলেন, সিএসইর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম। কারন, এই প্রশিক্ষণটিও প্রথম হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল। একই সাথে আপনারাও প্রথম প্রশিক্ষন গ্রহণকারী হিসেবে ইতিহাসের অংশীজন হলেন। আপনাদের অনুরোধ করবো যে, খুব গুরুত্ব আর মনোযোগ দিয়ে প্রশিক্ষণটি সম্পন্ন করবেন যেন পরবর্তীতে এই জ্ঞান আপনি কাজে লাগাতে পারেন।
অনুষ্ঠানে সিএসইর এমডি সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে অনেক আগ থেকেই কমোডিটি ডেরিভেটিবস এক্সচেঞ্জ রয়েছে। তারপরও এক্সচেঞ্জগুলো এবং প্রতিষ্ঠিত ব্রোকাররা নিয়মিত প্রশিক্ষনের আয়োজন করেন। এই প্রশিক্ষনগুলোর দুটি দিক আছে- প্রথমত, নতুন নতুন পরিবর্তনগুলো জানানো এবং দ্বিতীয়ত নতুন জেনারেশনকে প্রস্তুত করা। ইতোমধ্যে সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট রেগুলেশন অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দিয়েছে, যা খুব শিগগিরই অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।
সিএসইর এমডি বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মার্কেট এবং মার্কেট সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের উপযুক্তভাবে তৈরি করা। অর্থাৎ যারা এক্সচেঞ্জের সাথে যুক্ত হবেন তাদেরকে সঠিকভাবে প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান এবং ট্রেনিংয়ের ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। গত দুই বছর ধরে সে লক্ষ্যে সিএসই টিম সচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরনের নিয়মিত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, আজকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন, কারন এই প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীদেরকে যে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে, যা তাকে পরবর্তীতে তার প্রতিষ্ঠানে এমনকি বাজার প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। অর্থাৎ মার্কেট প্রস্তুতির কাজটি এতই ব্যাপক যে, সিএসইর একার পক্ষে সম্ভব না। বিনিয়োগকারী পর্যন্ত পৌঁছাত গেলে আপানরাই হবেন মধ্যজন যারা প্রথম প্রশিক্ষণগ্রহণকারী হিসেবে পরবর্তী জনকে প্রশিক্ষণ দিবেন। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াতে আপানাদের স্বাগতম এবং আমরা আশা করছি সবার সার্বিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় খুব অল্প সময়ে একটি সুগঠিত কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজটি আমরা দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারবো।
এমআই