চালের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ

আমদানি শুল্ক কমানোর পরও চাল আমদানিতে সাড়া মিলছে না। এ জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক–কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।

বিটিটিসি আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ সুপারিশ করেছে। বিটিটিসি বলেছে, সম্প্রতি বন্যায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল করার স্বার্থে সুনির্দিষ্ট মেয়াদে চাল আমদানিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক–কর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

বিটিটিসি চেয়ারম্যান মইনুল খান আজ গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যার কারণে সাত–আট লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছে। চালের বাজার ঠিক রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার করা এখন জরুরি।

চালে আমদানি শুল্ক (সিডি), নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি), অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও আগাম কর (এটি) মিলে ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর। এনবিআর ২০ অক্টোবর এআইটি ছাড়া চাল আমদানিতে তিন ধরনের শুল্ক কমিয়েছে। সিডি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ ও আরডি ২০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে এনবিআর। এ ছাড়া আগাম কর ৫ শতাংশের পুরোটাই প্রত্যাহার করেছে সংস্থাটি।

শুল্ক–কর কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর বলেছিল, এতে বাজারে শুধু চালের সরবরাহ বাড়বে না; বরং আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। আমদানি যেহেতু এখনো হয়নি, তাই বাজারেও এর প্রভাব পড়েনি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার বাজারে সরু অর্থাৎ নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া মাঝারি, অর্থাৎ পাইজাম চাল ৫৮ থেকে ৬৩ এবং মোটা, অর্থাৎ স্বর্ণা বা চায়না ইরি চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক কমানোর পর ভিয়েতনাম থেকে ২৬ টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ২৭ অক্টোবর। এলসি খোলার এমন কম প্রবণতা চালের বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে আজ ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ দশমিক ১৮ টন চাল আমদানি হয়েছিল। তার আগে, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন চাল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৪৮ টন। এনবিআর থেকে নেওয়া এসব তথ্য বিটিটিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর গতকাল সোমবার চালের মজুত, নিরাপত্তা মজুত, সম্ভাব্য ঘাটতি—এসব চিত্র জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বন্যায় আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে মনে করছে খাদ্য অধিদপ্তর।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্যার কারণে এবার চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চালের মজুত বৃদ্ধির বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার জন্য তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়কে আমরা চিঠি দিয়েছি।’

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের হাতে ১০ লাখ টন চালের মজুত ছিল। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টন এবং জুন পর্যন্ত বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ টন। সেই হিসাবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত সম্ভাব্য মজুত দাঁড়াবে ২১ লাখ টন।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার