কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে গত ১৫ জুলাই হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান হুকুমের এবং ৩৯১ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এ মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরাফাতকে হামলা উসকে দেওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখার কারণে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ১৫ জুলাই হামলায় সরাসরি জড়িতদের আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া, মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আরও ৮০০ থেকে ১০০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাসহ বহিরাগত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ইট, কাচ, কাচের বোতল, কাঠ, পাইপ, লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি দেশি ও বিদেশি অস্ত্র দিয়ে দফায় দফায় হামলা চালায়। তারা ককটেল বিস্ফোরণ করে ও হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে।
এজহারে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসীরা ওইদিন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান, যেমন- হল পাড়া (বিজয় ৭১ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, কবি জসীম উদ্দীন হল মাঠ, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ইত্যাদি), মল চত্বর, ভিসি চত্বর, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, টিএসসি, শহীদ মিনার, শহীদুল্লাহ হল গেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আঘাত ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
মামলা গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে শাহবাগ থানার অভ্যন্তরে একটি সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় মামলার বাদী মাহিন সরকার বলেন, ১৫ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বহিরাগতরা আমাদের বোনদের ওপর হামলা করে। আমাদের বোনদের শ্লীলতাহানি করে। এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি আমি। বিপ্লব পরবর্তী এই স্বাধীন বাংলায় ছাত্রলীগের নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার নেই। তারা নিঃশ্বাস নেবে জেলহাজতে। এ সময় তিনি অন্যদেরও মামলা করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কেউ নিজ অধিকারের কথা বলতে পারত না। যারা কথা বলত তাদের গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতন করে শাহবাগ থানায় দিয়ে দেওয়া হতো। হাসিনার গদিকে টিকিয়ে রাখার জন্য হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী সারা দেশের ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ১৫ জুলাইয়ে হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগ ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। ছাত্রদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে ছাত্রলীগ। আমরা চাই, এত রক্ত, এত জীবনের পর এই স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নামে কোনো সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন থাকতে পারবে না। এই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরই প্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এটি প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক তারিকুল ইসলাম, হামজা মাহবুব ও আব্দুল হান্নানসহ অনেকে।
এমআই