আওয়ামী লীগ সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন দেশে জলবায়ু খাতে কোনো ঋণ ছিল না। গত ১৫ বছরে এ খাতে জনপ্রতি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬১ ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৪৮৫ টাকা।
রবিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ (সিআই) আয়োজিত ‘জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায়বিচার ও সমতা : বাংলাদেশ এবং অন্যান্য এলডিসির জন্য জলবায়ু ঋণের ফাঁদের ঝুঁকি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ব্যাংকগুলোতে চামড়া শিল্পের ঋণ ও খেলাপি কত জানতে চেয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ুর সংকট নিরসনে বিদেশি ফান্ড কীভাবে আসছে সেটা নির্ণয় করা দরকার। সেটা অনুদান নাকি ঋণ হিসেবে আসছে, সেটার আলোচনা অবশ্যই করতে হবে। শুধু ঋণ নিতে থাকলে জলবায়ু সংকট নিরসনের পাশাপাশি ইকোনমিক ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো বা আল্ট্রা ক্যাপিটালিস্ট এ পৃথিবীতে কতটা সম্ভব সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। একইসঙ্গে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া শিল্প বুড়িগঙ্গা এবং ধলেশ্বরী নদীর কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করেছে তা জানতে চান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায়বিচার এবং সমতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু তহবিল প্রদান যথেষ্ট নয়, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সম্পদ সবচেয়ে দুর্বল সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছায় এবং তাদের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ক্ষমতা দেয়। একটি অতি পুঁজিবাদী মডেল সহজাতভাবে প্রকৃত জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং সমতা বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের এই ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত স্বার্থের দ্বন্দ্ব গভীরভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং লাভের চেয়ে দুর্বলদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া বিকল্প পন্থা অন্বেষণ করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তরুণরা যথার্থভাবে জলবায়ু ন্যায়বিচার দাবি করছে। আমাদের তাদের এমনভাবে ক্ষমতায়িত করতে হবে, যাতে তারা কর্পোরেট ফাঁদে না পড়ে এবং জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের প্রবর্তক হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনে অভিযোজন এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়নের দিকে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি, আরও রেয়াতি অর্থায়নের সংস্থান এবং জলবায়ু বন্ডের মতো উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, এযাবতকাল পর্যন্ত জলবায়ু খাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জমা করেছে ১৪৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ১৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছেন, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যাকে ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এই পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, গাইবান্ধার কৃষকের ওপর যেমন, ভারতের আসাম ত্রিপুরা রাজস্থানের কৃষকের জন্যও একই। তাই এই পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষায় টেকসই পদক্ষেপ জরুরি।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে আমাদের একটা মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এলডিসির জন্য বার্ষিক ৪৮০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যার মধ্যে ২০২৫ সাল থেকে অভিযোজন অর্থায়ন ১০০ শতাংশ অনুদান-ভিত্তিক হতে হবে। জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ মওকুফের বিভিন্ন উদ্ভাবনী ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।