চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় দৈনিক ‘আমার দেশ’ বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন পত্রিকারটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মাহমুদুর রহমান বলেন, যত কষ্টই হোক, ডিসেম্বর মাসের মধ্যই ‘আমার দেশ’ পত্রিকা আপনাদের হাতে তুলে দেব। আমার দেশ পত্রিকা আবারও জনগণের পক্ষে কথা বলবে। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। শুধু সরকারের কাছে চাওয়া, এ পত্রিকা চালুর ব্যাপারে যেন আইনি বাধায় না পড়ে সে সহযোগিতা করা।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রেস সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন প্রেস বসাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। এ ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে আমার দেশের মতো মিডিয়া দরকার। ‘আমার দেশ’ কর্পোরেট স্বার্থের বাইরে, কোনো দলের স্বার্থের বাইরে, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দাঁড়াবে। দেশের মানুষের জন্য দাঁড়াবে। এজন্য ‘আমার দেশ’ দ্রুত চালু করতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্য দুটি প্রেস থেকে ‘আমার দেশ’ ছাপা হবে।
পত্রিকাটি নতুন করে চালু করতে নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, হাতে আর আড়াই মাসের কম সময় আছে। অফিস পেয়ে গেলে আশাকরি এর আগেই আমরা আসতে পারব। অন্য প্রেস থেকে ছাপা হলেও ছাপানোর আগে ম্যাটার তৈরি করতে হবে। তার জন্য অফিস দরকার। আমার ধারণা আমার সহকর্মীরা আমার সঙ্গে আরও এক বছর লড়াই করতে রাজি হবেন। কিন্তু অফিস খুঁজে পাওয়ার জন্য এখম আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অফিসটা সেটাপ করাই এখন চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রেসের কিছুই অবশিষ্ট নেই, জমিটা শুধু আছে। একটা নতুন প্রেস করতে যে টাকা প্রয়োজন সে অর্থ আমার নেই। আমরা যারা আমার দেশের পরিচালক তারা সবাই সীমিত অর্থের মালিক। আমরা কোনো কর্পোরেট মিডিয়া না, কোনো দলীয় মিডিয়া না। আমরা কষ্ট করে এটা চালাতাম। এ পত্রিকা চালাব, লেখালেখি করব এটাই আমার ইচ্ছা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, দুদিন আগে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তালা ভেঙে ‘আমার দেশ’ প্রেস আমাদের বুঝিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, প্রেসের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমনকি ইলেকট্রিক প্যানেল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দুটি মেশিনের খণ্ডাংশ পড়ে আছে, যেগুলো ভাঙা সম্ভব না বলে চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। এগুলো যে টুকরো-টুকরো করে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছু প্রমাণ প্রেসের মধ্যে পড়ে ছিল। দেখে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা আমাকে টুকরো করতে না পেরে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রেস টুকরো টুকরো করেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। আমাদের জন্য ইতিবাচক যে সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুজন ওসি প্রেসের অবস্থা দেখেছেন। একজন ওসি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, এ প্রেসের আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।
তিনি আরও বলেন, যেদিন আমরা ‘আমার দেশ’ পত্রিকার কম্পিউটার ও অন্যান্য জিনিসপত্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে চেয়েছিলাম, সেদিন আমাদের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আমি জেলখানায় আটক ছিলাম। জেলখানায় আমাকে একজন খবর দিয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি এখনো জেলখানায় জীবিত আছেন। তিনি তখন জামায়াতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আজহার ভাই। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার কোনো সহকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না? আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সহকর্মীর কিছুই হয়নি। সবাই নিরাপদে ছিলেন। ওই মুহূর্তে এটাই আমার জন্য স্বস্তির সংবাদ ছিল।
দেশের মিডিয়া বিগত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোসরের কাজ করেছে বলে মন্তব্য করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিবাদ যে এত ভয়ংকর হয়ে ওঠেছিল, তার পেছনে যেমন পুলিশ, আমলা, ব্যবসায়ী, সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল, তার সঙ্গে মিডিয়ারও ভূমিকা ছিল। মিডিয়া ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোসরের কাজ করেছে। সংবাদ সম্মেলনের নামে নির্লজ্জ তেলবাজির প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি। সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের ছোট হয়ে যাওয়ার কথা। এতটা ছোট হতে পারে আপনাদের সম্পাদকেরা। আমার তো বিদেশে বসেই লজ্জা লাগতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেসের যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি এবং কাগজের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি রাষ্ট্রের কাছে এ ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করবো।