মোটর সাইকেল থেকে ভারী যানবাহন- সড়কে যাচ্ছেতাই হর্ণ ব্যবহার করছে চালকেরা। এই শহরে উচ্চশব্দ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ভোর থেকে শুরু হওয়া শব্দের অত্যাচার চলে গভীর রাত অবধি। সিগন্যাল ছাড়তে না ছাড়তেই; কে কার চেয়ে বেশি জোরে হর্ন বাজাবেন- চলতে থাকে সেই প্রতিযোগিতা।
নিরাপদ শব্দসীমা ৬০ ডেসিবেল হলেও বাস্তবতা হচ্ছে নিরব এলাকাতেই দূষণের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের বেশি। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের শব্দ দূষণে ২০৪৫ সালের মধ্যে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন দেশের দেড় কোটি মানুষ। ভয়াবহ এই দশা থেকে বেরিয়ে আসতে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোসহ শব্দের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক ও যানজটপ্রবণ এলাকায় এই মাত্রা ৭০ ডেসিবেল। তবে বাস্তবতা হলো হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এলাকাতেও শব্দের দূষণে টিকে থাকা দায়।
তারপরও এমন বেপরোয়া হর্ন ব্যবহারের কারণ হিসেবে, অসচেতনতা আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবকে দেখছেন চালক ও সাধারণ মানুষ। চালকদের মতে, হাইড্রোলিক হর্ন বাজালেও পথচারীরা শুনতে পায় না, তারা ইচ্ছেমতো রাস্তায় চলে। সেখানে কম শব্দের হর্ন বাজালে তো সবাই গাড়ির নিচে পড়ে মারা যাবে।
বাংলাদেশে যেসব হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে সে সবেতো বটেই, অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্নও। টাকা দিলেই মেলে যেকোনো ধরণের হাইড্রোলিক হর্ন। যদিও ৭ বছর আগেই হাইড্রলিক হর্ন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।
কিন্তু এসব বিক্রি হচ্ছে সব জায়গায়। খুচরা বিক্রেতারা জানান, আমদানি না হলে হাইড্রোলিক হর্ন পাওয়া যাবে না।
বৈশ্বিক একটি গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল সিটিস ইনস্টিটিউশনের সমীক্ষা দেখাচ্ছে, ঢাকায় যে ধরনের শব্দদূষণ ঘটছে তাতে এই শহরের চার ভাগের একভাগ মানুষ কানে কম শোনের কথা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে শহরাঞ্চলের ৪৫ ভাগ মানুষ কানে কম শুনবেন। সে হিসাবে ২০৪৫ সালে প্রায় দেড় কোটির বেশি মানুষ হারাবেন শ্রবণশক্তি।
নীরব এলাকায় হর্ন না বাজানোর নির্দেশনা থাকলেও দেখা যাচ্ছে, ওইসব স্থানে শব্দের মাত্রা ১০০ এর উপরে থাকছে।
পরিবেশবিদ আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, হর্ন শুনে বুঝার উপায় নেই কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ। কিন্তু আমরা যখন এটাকে ৬০ ডেসিবলের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবো তখন হর্ন শুনেই বুঝা যাবে এটি ৬০ এর মধ্যে নাকি ১০০ ডেসিবল তৈরির মতো হাইড্রোলিক হর্ন।
এমআই