দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আধিপত্য বাড়ে ভারতের। বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে দেশটি। তারই অংশ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বাধ্য করে তারা। পাকিস্তান থেকে আমদানি করা সব পণ্য লাল তালিকাভুক্ত করে এনবিআর। পাকিস্তানের অনুরোধের পর গতকাল মঙ্গলবার সেই লাল তালিকা থেকেও মুক্ত হয়েছে দেশটির সব ধরনের পণ্য।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। ওই সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশের সঙ্গে স্তিমিত হয়ে পড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরালো করার আহ্বান জানান।
সেই সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান এখন আবার বাণিজ্য শুরু করতে আগ্রহী।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. আবদুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের রেড লেন থেকে মুক্ত করা হয়েছে। শুধু পাকিস্তানের পণ্য এ রেড লেনে ছিল। ন্যাশনাল সিলেক্টিভিটি ক্রাইটেরিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এ পণ্যগুলোকে রেড লেন থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ পণ্যে কঠোরতা রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতির পথে হাঁটছে এনবিআর। এতে করে দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে কোনোরকম জটিলতা থাকবে না।
এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য চালান ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়ার বহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া লোকাল ক্রাইটেরিয়ার আওতায় সময়ে সময়ে ঝুঁকি বিবেচনায় ওই দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য ভিত্তিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট চালু রাখার বিষয়ে কাস্টমস হাউজগুলো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
এনবিআররের এমন সিদ্ধান্তে দেশের বাণিজ্যে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে দাপ্তরিক যে জটিলতা আছে, তা কেটে গেলে দেশে উৎপাদনমুখী কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে। দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে পাকিস্তানি তুলা, সুতা ও কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। পাকিস্তানি শিশুখাদ্য, জুস, কাটলারি ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে চামড়া, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে পাকিস্তানিদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। পাকিস্তানের সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি পণ্য, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য।
এমআই