হামদর্দের বিরুদ্ধে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান হামদর্দ (ওয়াক্‌ফ) ল্যাবরেটরীজের বিরুদ্ধে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর বাংলামোটরে হামদর্দের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ সময় প্রায় কয়েক শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাত, গ্র্যাচুইটি ভাতা বৃদ্ধি, বিপণন পরিচালক শরিফুল ইসলামের পদত্যাগসহ মোট ১৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন তারা।

আন্দোলেন আসা কর্মকর্তাদের ‘দফা এক দাবি এক, শরিফ স্যারের পতদ্যাগ’; ‘আমাদের দাবি, আমাদের দাবি, মানতে হবে, মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এতে অংশগ্রহণ করা এক কর্মকর্তা বলেন, হামদর্দে কর্মরত যেসব কর্তারা আছেন, তারা আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড অনেকটা খেয়ে (আত্মসাৎ) ফেলেছে। আগে আমাদের প্রভিডেন্ট দ্বিগুণ দেওয়া হলেও এখন তা দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ আমাদের সুযোগ-সুবিধা বর্তমানে নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা নিজেদের হর্তাকর্তা ভেবে হামদর্দের বাকি চাকুরিজীবীদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। তারা নানান অজুহাতে আমাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন।

উল্লেখ্য, কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় ব্যক্তির আয় থেকে প্রতি মাসে মূল বেতনের সাত থেকে ১০ শতাংশ কেটে একটি তহবিলে রাখা হয়। একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানও ওই তহবিলে জমা রাখে। এর মাধ্যমে যে অর্থ জমা হয় তা কর্মী চাকরি শেষে পান। টাকা জমা রাখা এই তহবিলকেই বলা হয় প্রফিডেন্ট ফান্ড।

এ বিষয়ে জানতে হামদর্দের মুখপাত্র আমিরুল মোমেনীন মানিককে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আন্দোলেন আসা এই কর্মকর্তা আরও জানান, হামদর্দ বহু আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যে যাতায়াত ভাতা নির্ধারণ করেছিলো, তা এখনো বহাল রয়েছে। অথচ নির্ধারিত ভাতার তুলনায় যাতায়াত খরচ ১২০ গুণ বাড়লেও তাদের যাতায়াত বিলের উন্নতি হয়নি। এতে তাদের নানান সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।

বেতন নিয়ে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা এখন নিয়মিত বেতন পাচ্ছি না। আবার কর্তৃপক্ষ নানান অজুহাতে আমাদের বেতন কাটতে চায়। এতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পরিবার আর্থিক হুমকির মুখে পড়ছে।

বিপণন পরিচালক শরিফুলের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে হামদর্দের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রধান দাবি মার্কেটিং ডিরেক্টর শরিফুল স্যারের পদত্যাগ। তিনি আমাদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এছাড়া প্লাস্টিক কোম্পানির সাথে যোগসাজশে তিনি হামদর্দের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জোরপূর্বক কিছু ওষুধি পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এতে তিনি প্লাস্টিক কোম্পানি থেকে কমিশন (অবৈধ উপার্জন) গ্রহণ করেন।

মেয়াদোর্ত্তীন পণ্য নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হামদর্দ মেয়াদোর্ত্তীন পণ্যের বিপরীতে কোন পণ্য পরিবর্তন করে দেয় না। কিন্তু বাকি কোম্পানিগুলো তা পরিবর্তন করে দেয়। এতে পণ্য বিক্রি করতে না পারার কারণে কোম্পানি বেতন কাটার সুযোগ খুঁজে।

উপমহাদেশের অন্যতম পরিচিত আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান হামদর্দের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোন সুনাম ক্ষুণ্ণ না হওয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া তাদের গ্র্যাচুইটি বিল বৃদ্ধিসহ মোট ১৯ দফা দাবিতে তারা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামদর্দের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড চলমান আছে। তবে এ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিও আছে। এসব নিয়ে তারা দাবি তুলেছেন। এ দাবির মধ্যে কিছু যৌক্তিক আবার কিছু বাড়তি দাবি আছে। যৌক্তিক দাবিগুলো খুব শিগগিরই ব্যবস্থাপনা পর্ষদ পর্যালোচনা করবেন।

বিপণন পরিচালক শরিফুল নিয়ে তিনি বলেন, শরিফুলকে নিয়ে তাদের কিছু অভিযোগ রয়েছে। তারা লিখিত আকারে আজ প্রধান কার্যালয়ে তা জমা দিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ যৌক্তিক হলে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ থেকে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা যায়, হামদর্দ (ওয়াক্‌ফ) ল্যাবরেটরীজ বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিধিবিধান (সংশোধিত ২০১৯) অনুযায়ী, হামদর্দে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী মোতাবেক অর্জিত নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে প্রাপ্য হবেন। যা লভ্যাংশ বন্টন তহবিলে জমা হবে এবং এ অর্থ হামদর্দ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্টন বা প্রদান করা হবে।

এদিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদীতে অবস্থিত হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ সম্প্রতি পদত্যাগ করায় তাকে সপদে বহলের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের পক্ষে কথা বলায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফারুক উজ জামান চৌধুরীকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বগুড়া হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যক্ষ নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ১৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে হামদর্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার