পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবি) লিমিটেডের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) ২০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। এতে অডিট আপত্তির মুখে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয় তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এর পর থেকে কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরি হারানোর আতঙ্কে ছিলেন। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সিএসআরের অর্থ লোপাটের অভিযোগে বিএটিবিসির প্রধান কার্যালয়ের অডিট বিভাগের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স প্রধানসহ, লিগ্যাল অ্যান্ড অ্যাক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান মুবিনা আসাফ, বিজনেস কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফুয়াদ বিন সাজ্জাদ পদত্যাগে বাধ্য হন।
সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে কোম্পানির অডিট বিভাগ। এই অর্থ খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে অডিট বিভাগের কাছে কোন জবাব দিতে পারেনি কোম্পানির এমডি শেহজাদ মুনিম। পরবর্তীতে এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স প্রধানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অডিট বিভাগে জানিয়েছেন বিষয়টি উর্ধ্বতন সবাই অবগত। এ ঘটনার পরই চাকরিচ্যুত করা হয় তাঁকে।
এবিষয়ে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব সৈয়দ আফজাল হোসেন অর্থসংবাদকে বলেন, কোম্পানির সিএসআরের ২০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স প্রধানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। জানা মতে, এতে জড়িত সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) ২০০ কোটি নয়ছয়ের ঘটনায় তোপের মুখে পড়েন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। যে কোন সময় তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে অথবা তারাও চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন এমন আতঙ্কে ছিলেন তাঁরা। পরেক্ষনে প্রমানের ভিত্তিতে জরিতদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির আড়ালে সারাদেশের কৃষকদের দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। শুধুমাত্র কোম্পানির তালিকাভুক্ত কয়েক’শ চাষির মাঝে ‘দীপ্ত’ প্রকল্পের সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
২০১৩ সালে পাহাড়ে অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালানো হয়েছে বলে কোটি টাকা খরচে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে বিএটিবি। আইনের ফাঁক গলে এসব বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে কোম্পানির লোগো প্রচার করিয়ে নিচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত অন্য কোম্পানির চাষিদের আকৃষ্ট করতে এবং পত্রিকায় নিজেদের লোগো ব্যবহার করতেই এসব সোলার বিতরণ করছে বিএটিবি।
বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ৪টি গ্রামের ৫৭৬টি পরিবারকে ‘দীপ্ত’ প্রকল্পের অধীনে সৌরবিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএটিবি। হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুত সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচারণা চালালেও, দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র নিজ চাষিদের। এদের মধ্যে অনেক অবস্থাসম্পন্ন কৃষকও রয়েছেন। তামাক চাষিরা জানান, ২০ ওয়াটের এ সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে তিনটি বাতি জ্বালানো সম্ভব।
সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের একটি সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে বিএটিবি’র খরচ হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। অথচ বিজ্ঞাপনেই খরচ করেছে কোটি টাকার ওপর।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকেই স্থানীয় র্কতাব্যক্তিদের সঙ্গে এ সৌরবিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য কথার্বাতা চালাতে থাকে বিএটিবি। এ ক্ষেত্রে পাড়ার হেডম্যান, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি।
এসএম