আন্তর্জাতিক ফুটবলের মঞ্চে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে। গোলকিপার হিসেবে তার বীরত্ব যেমন প্রশংসিত, তেমনি খেলার মাঠে তার আচরণ নিয়ে বিতর্কেরও কমতি নেই। এবার আবারও আলোচনায় এলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই গোলকিপার, তবে এবার কারণটি নেতিবাচক।
ফিফার শৃঙ্খলা কমিটি মার্তিনেজকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে, আপত্তিকর আচরণ ও ফেয়ার প্লে নীতি লঙ্ঘনের দায়ে। এর ফলে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নামতে পারবেন না তিনি।
মার্তিনেজের নিষেধাজ্ঞার পেছনে অবশ্য দুটি আলাদা ঘটনা দায়ী। প্রথম ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, চিলির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে। ওই ম্যাচ শেষে উদ্যাপনের সময় কোপা আমেরিকার রেপ্লিকা ট্রফি নিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন মার্তিনেজ। এর আগেও কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর ঠিক একই ধরনের উদ্যাপন করেছিলেন এই গোলকিপার, যা নিয়ে তখনও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবারও তার আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ মেলায় ফিফার শৃঙ্খলা কমিটি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলো।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১০ সেপ্টেম্বর, কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের পর মার্তিনেজ রাগান্বিত হয়ে মাঠ ছাড়েন এবং এক পর্যায়ে ক্যামেরা অপারেটরের সরঞ্জামে আঘাত করেন। এই ঘটনার পরপরই জনি জ্যাকসন নামে ওই ক্যামেরা অপারেটর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন, মার্তিনেজের আচরণে তিনি ‘লাঞ্ছিত’ হয়েছেন এবং এ ঘটনায় তিনি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। এই দুটি ঘটনার জন্যই মার্তিনেজকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
মার্তিনেজের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) ফিফার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে এএফএ জানিয়েছে, ‘ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করছি।’ শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার আগে মার্তিনেজ এবং অ্যাসোসিয়েশন নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল বলেও জানানো হয়।
তবে, আর্জেন্টিনার আপত্তি সত্ত্বেও ফিফার শৃঙ্খলা কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং মার্তিনেজকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে আর্জেন্টিনা ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে তাকে ছাড়া খেলতে বাধ্য হবে। আগামী ১০ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে এবং ১৫ অক্টোবর বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে গোলপোস্টের দায়িত্বে মার্তিনেজকে দেখা যাবে না।
এদিকে মার্তিনেজের অনুপস্থিতি আর্জেন্টিনার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে আসতে পারে। কারণ, ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। ৬ জয় ও ২ ড্র নিয়ে তাদের অবস্থান শক্ত। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলম্বিয়া। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের অবস্থা ভালো নয়, তারা ৮ ম্যাচে মাত্র ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার ৫ম স্থানে অবস্থান করছে।
এই বাছাইপর্ব থেকে দক্ষিণ আমেরিকার শীর্ষ ৬টি দল সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক ফর্ম খুব ভালো থাকলেও মার্তিনেজের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তাদের পারফরম্যান্সে কতটা পড়বে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।