প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিন যুক্তিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুক্তিগুলো হচ্ছে প্রবাসী পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের অর্থ দেশে বিনিয়োগ করা, বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করা এবং প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) অন্তর্মুখী প্রবাহ বৃদ্ধি করা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত বুধবার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) সচিব আবদুর রহমান খানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। দেশে ১৯৮১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড চালু করা হয়। মুনাফা পাওয়া যায় সরল সুদে।
আইআরডি সচিব আবদুর রহমান খান এ বিষয়ে গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, এখনো তাঁর কাছে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আসেনি। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।
ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধি ১৯৮১ (সংশোধিত ২৩ মে ২০১৫) অনুযায়ী, যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। কোভিড-১৯ এর প্রকোপ চলাকালে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আইআরডি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সমন্বিত বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে এক কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এরপর ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে যেকোনো পরিমাণ বিনিয়োগ এ দুই বন্ডে আসছে। তবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার এ বন্ডের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগের সুযোগও নেই। ফলে আগে বিনিয়োগ করা অর্থ প্রবাসীরা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এসব কথা উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দূতাবাসগুলোর পক্ষেও রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা সীমা তুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আইআরডি সচিবকে বলেছে, প্রবাসী আয়প্রবাহের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাতিল বা শিথিল করা দরকার।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওয়েজ আর্নার্স বন্ড কেনায় এক কোটি টাকার সীমা বাতিল করার প্রস্তাব করেছি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা লাগবে, আশা করছি, বাংলাদেশ ব্যাংক তা করে দেবে।’ এ বন্ডের মাধ্যমে আরও বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় এসব বন্ড কেনা যায়। এ বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। আবার বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই।
এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এতে বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির আর্থিক সুবিধা রয়েছে।
মেয়াদপূর্তির আগে বন্ড ধারকের মৃত্যু হলে তাঁর মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটিই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ড ধারকের বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধাটি নিতে গেলে মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ড ধারকের মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।
১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে এ–বিষয়ক একটি প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করবে আইআরডি। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা অনুমোদন করলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে আইআরডি, যা বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। তবে মুনাফা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে বলে এতে অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতও লাগতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাবটি আগে আসুক।’