বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের অনৈতিক হস্তক্ষেপে অস্থির শেয়ারবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি তুলেছেন। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের পুঁজিবাজারের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে। তবুও আশার আলো দেখা যায়নি, উল্টো অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে। এজন্য স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বারবার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন, ভুল সিদ্ধান্ত ও অনৈতিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। নতুন এ চেয়ারম্যানের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট পূর্বের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। একইসঙ্গে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে যেসব ব্যাংকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগেই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে। ফলে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্বে এসে এ পর্যন্ত একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সবগুলো সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে কয়েকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। এছাড়া আগের কমিশনের যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামানকে দপ্তরবিহীন ও চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে খোদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইফুর রহমানকে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই দপ্তরবিহীন বা একরকম ওএসডি করে অনৈতিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠে রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন সংকট তৈরি হয়। যার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির বিষয়ে নতুন নতুন তদন্ত শুরু করে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেয়ারবাজারে। এ সংকট মুহূর্তে বিএসইসির নির্দেশে আজ নতুন করে একযোগে ২৭ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। এতো ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে এটি দেশের শেয়ারবাজারে আরও অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ২৭টি কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেসব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), লভ্যাংশ বিতরণে অনিয়ম ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এ ধরণের কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেখানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। ডিএসইতে পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই, ফলে চেয়ারম্যানও নেই, এছাড়াও ডিএসইতে দীর্ঘদিন এমডি পদ শূন্য রয়েছে। একজন ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে স্টক একচেঞ্জ পরিচালনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রধান টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নেই। ফলে স্টক একচেঞ্জের কার্যকম ব্যাহত হচ্ছে। সেসব বিষয় নিয়েও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন এই চেয়ারম্যান। ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন এ চেয়ারম্যানকে অযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে নতুন এ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন বিনিয়োগকারীরা।
জেড গ্রুপে পাঠানো ২৭টি কোম্পানির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও ডিজিএম শফিকুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানিনা। তাই কোন মন্তব্য করতে রাজি নই।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের একজন সাবেক পরিচালক অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের দুঃখের কোন শেষ নেই, আমাদের দুঃখের কথা কার কাছে বলবো। বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তগুলো কেমন যেন অগোছালো হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। আমরা বাজারের পুরনো স্টক ব্রোকার। আমাদের দৃষ্টিতে কমিশন থেকে স্বল্পমেয়াদী যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্তগুলোতে বাজারের আস্থা ফেরত আনার জন্য নেওয়া দরকার ছিল। বাজারের সব অংশীজনদের একটা প্ল্যাটফর্মে আনার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। সেখানে আস্থা ফেরাতে যেসব সিদ্ধান্ত দরকার ছিল, তার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে ব্যাপকভাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে যেভাবে ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে এক ধরণের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন, সেখানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অবস্থা তার পুরো উল্টো। বিশেষ করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কালক্ষেপন এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। ফলে ডিএসইর প্রায় ২৪০ এর অধিক সদস্য প্রতিষ্ঠান ও নতুন ট্রেক হোল্ডাররা বিষয়গুলো ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ফলে শেয়ারবাজারে অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের সবার জায়গা থেকে বুঝা উচিত বাজারে কি আস্থা ফিরে আসছে কি-না? আমরা কি বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে পারছি কি-না? এ চিন্তাটা সবারই করা উচিত। এসইসি যেমন বাজারের স্টেকহোল্ডার, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক একচেঞ্জ ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও স্টেকহোল্ডার। সব স্টেকহোল্ডারদেরকেই এ বিষয়ে ভাবতে হবে। ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই প্রায় দেড় মাস সময় অতিবাহিত হচ্ছে। তাই ডিএসইর পূর্ণাঙ্গ বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা দরকার।
সূত্রে মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কিন্তু, বিএসইসির নতুন কমিশন ইতোমধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার একটিও সঠিক হয়নি, কোনো সুফলও দেখা যায়নি। বরং কমিশনের বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যা দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এমনকি, কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফলে, পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরার পরিবর্তে বিএসইসির সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে।
জানা গেছে, আগের কমিশনের যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামান এবং মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরীসহ দুজন নতুন কমিশনার পুনরায় নিয়োগ দিয়ে বিএসইসিকে ঢেলে সাজানো হয়। এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে কেবল এ টি এম তারিকুজ্জামানের পুঁজিবাজারে সঙ্গে সরাসরি দীর্ঘ ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে, গত ১১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তিন মাস বা ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে এ টি এম তারিকুজ্জামানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়। সরকারের ওই আদেশ জারির চার দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে দপ্তরবিহীন করে আদেশ জারি করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ। পরবর্তীতে চাপ প্রয়োগ করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এ টি এম তারিকুজ্জামানকে। নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে দপ্তরবিহীন বা ওএসডি করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যার ফলে বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও, নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে এরই মধ্যে তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে কমিশন। চতুর্থবারেও নিয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। সেখানেও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশন সদস্যদের বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে বাজারে কমিশনের অদক্ষতা ফুটে উঠছে। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একই ভুল বারবার করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা হারাবেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা অর্থসংবাদকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আমরা যেভাবে বিএসইসির সংস্কার চেয়েছিলাম, তা মোটেও হয়নি। বিএসইসিতে পুঁজিবাজার বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নীতিনির্ধারক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন কমিশনে যারা নীতিনির্ধারক পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নিজেদেরকে এতটাই জ্ঞানী ভাবছেন যে, আমাদের সঙ্গে কথা বলা বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। এর মধ্যে আবার যে একজন মেধাবী ও যোগ্য কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালকদেরকে ষড়যন্ত্র করে কোনঠাসা করা হয়েছে। তাই, এই কমিশনের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারছি না।
গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারিকুজ্জামানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপান। তিনি বলেন, কিছু কাজ মন্ত্রণালয়ের সাথে কো-অর্ডিনেটর হয়ে করতে হয়। এই বিষয়ে পাবলিকলি কিছু বলার নেই।
ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বারবার ভুল এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি গত ১৫ বছরে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের পর এই খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আগের চারজন কমিশনারের মধ্যে তিনজনকে বাদ দিয়ে পুনর্গঠন হয় কমিশন। নতুন চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অন্যান্য কমিশনারদের মধ্যে- মো. আলী আকবর এবং ফারজানা লালারুখ। এছাড়াও আগের কমিশনার হিসাবে রয়েছেন মো. মোহসিন চৌধুরী। নতুন কমিশন গঠনের পর মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি কমিশনের দুর্বলতা ও অদক্ষতা সামনে আসে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পর্ষদে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এতে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে নিয়োগ পাওয়া দুজন পরিচালক নিজ থেকেই সরে দাঁড়ান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এ দুজনের স্থানে নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা হলেন-হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এএফ নেসারউদ্দিন ও জেডএন কনসালট্যান্টের সিইও সৈয়দা জাকেরিন বখত নাসির।
নতুন নিয়োগেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিএসইসি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তারাও যোগ দেননি। পরে নিয়োগ দেওয়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানকে। এই সিদ্ধান্তেও আইন লঙ্ঘন করেছে বিএসইসি। কারণ স্টক ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার ‘কে’ উপধারায় বলা আছে-কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মোমিনুল ইসলাম এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
এছাড়াও ওই আইনের ৫’র ধারার ‘সি’ উপধারায় বলা আছে, গত তিন বছরের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পার্টনার হিসাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্য হবেন না। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা যথেষ্ট শেয়ারধারীও স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। আইনের ‘(ডি)’ উপধারায় বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরের মধ্যে কেউ স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোনো সম্মানি নিয়ে থাকলে তিনিও স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না। আগে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এই ধারা বিবেচনায় তারা কাজে যোগদান করেনি। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুসারে স্টক পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ৬ জন, সেনাবাহিনী মনোনীত ১ জন, ট্রেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ৪ জন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ১ জন এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে পর্ষদে পরিচালক থাকেন। বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে বিতর্ক চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, বাজার নিয়ে বিচার করতে গেলে লম্বা সময়ের দরকার। কিন্তু নতুন কমিশন তো মাত্রই নিয়োগ পেলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে যেসব জায়গায় অন্যায়, অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো প্রতিকার সবাই চায়। কিন্তু পুঁজিবাজার একটা স্পর্শকাতর জায়গা। যেমন- ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে চারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে এখানে প্রশ্ন চলে আসে। তাই এখানে দূরদর্শীতাসম্পন্ন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল। এসব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়তো এতটা আতঙ্কিত হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএসইসির কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে এখনো কয়েকটা সিদ্ধান্তের পদক্ষেপ এবং প্রতিফলন ঘটালে শেয়ারবাজারের সংকট কাটানো সম্ভব। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির দর ইস্যু মূল্যের নিচে আছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোম্পানি আইনের কোথাও ‘নো ডিভিডেন্ট’ শব্দ নেই। বাজারে গতি ফেরাতে এখান থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যদি রিটার্ন না পায়, তাহলে শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা হারাবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে পুঁজিবাজারে গতি ফেরানো সম্ভব।
এমআই