ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন

ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন
মানুষ হিসেবে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি বটে তবে আমাদের জন্মের শুরুতে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। কারও জন্ম হয়েছে রাজপরিবারে, কারও ভিখারির পরিবারে। এত বড় একটি ব্যবধানকে সামলিয়ে যদি কেউ নিজেকে গড়ে তুলতে চায় তবে তাকে ভীষণ পরিশ্রম করতে হবে। তবে শত চেষ্টা করলেও রাজপরিবারের সমতুল্য হওয়া সম্ভব নয়। অনেকে বলবে রাজপরিবারে জন্ম হয়নি তাতে কিছু যায় আসে না, সেটা ভুল।

আবার ভাষাগত বা ভৌগলিকভাবে জন্মগ্রহণও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে যদিও সম্ভব জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন আনা, যেমন মাইগ্রেশনের মাধ্যমে একদেশ থেকে আরেক দেশে মুভ করা এবং সে দেশের ভাষা শেখা সম্ভব। জন্মের শুরুতে যে চেহারা আমরা পেয়ে থাকি তারও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে নিজ নিজ জায়গা থেকে চারিত্রিক, গুণগত, শিক্ষা এসব কিছুর পরিবর্তন আনা সম্ভব পরিশ্রমের বিনিময়ে।

উপরের আলোচনায় আমরা বলতে পারি ভাগ্য পুর্বনির্ধারিত। যেটা হবার সেটাই হবে। চেষ্টা শুধুমাত্র ভাগ্যকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর উৎস মাত্র। এখন প্রশ্ন ভাগ্য তাহলে কী? ভাগ্য কি জন্মগতভাবে দিকনির্দেশনার চাবিকাঠি, নাকি অন্য কিছু? ভাগ্য যদি পূর্বনির্ধারিত হয়ে থাকে তবে তা আগেভাগে জানার সুযোগ নেই। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ জানতে হলে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে হবে। তার আগে কিছুই জানা সম্ভব নয়। ভাগ্য জন্মগতভাবে দিকনির্দেশনার চাবিকাঠি এবং সে চাবিকাটি আমাদের নাগালের বাইরে।

তবে বিশ্বাসের সূত্র ধরে একটি দিকনির্দেশনা করতে পারি এবং যেকোনো একটি চাবিকাঠি বেছে নিয়ে আমরা জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া দিকনির্দেশনার সাথে মিলতে শুরু করে , যার ফলে অনেকের জীবনের সাফল্য সহজ বলে মনে হয়।

তবে যারা জীবন চলার পথে দিকনির্দেশনার ভুল চাবিকাঠি নিয়ে যাত্রা করে, তখন দেখা যায় শত চেষ্টা সত্ত্বেও মনঃপূত সাফল্য আসে না। সাফল্য ছাড়া চেষ্টাকে সমাজে পরাজিত জীবন বলা হয়। মজার ব্যাপার হলো মানবজাতির প্রতিটি সাফল্যের পেছনে যে চেষ্টা জড়িত তার বেশির ভাগেই পরাজয় নিহিত। তাই তো প্রবাদ বাক্যে বলা হয় ‘failure is the pillar of success’ কখনও শুনিনি কেউ বলেছে ‘success is the pillar of failure’- আবার অনেক সময় বলা হয় “পারিবে না এ কথাটি বলিবে না আর, একবার না পারিলে দেখ শত বার।”

এই শতবার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকের জীবনের পুরো সময়টিই হয়তো শেষ হয়ে যায়, আবার যারা প্রথম চেষ্টায় সাফল্যের সন্ধান পায় তাদের জীবনে নতুন সাফল্যের সুযোগ আসে। মনে হচ্ছে জীবনটা স্রোতের প্রতিকূল আর অনুকূলের মত। শুধু দিকনির্দেশনার সময় যদি সঠিক চাবিকাঠিটি পাওয়া যায় তবে স্রোতের অনুকূলে জীবনটাকে নৌকার মতো পাল তুলে শুধু হাল ধরে রাখতে পারলেই সহজে গন্তব্যস্থলে পৌছে যাওয়া সম্ভব।

আর সেটার জন্য দরকার ভাগ্যের। তাহলে বলতে পারি ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত এবং তা নিয়ন্ত্রিত হয় জন্মের শুরুতে। চেষ্টা শুধুমাত্র সময় পার করার ক্রিয়াকলাপ, ক্রিয়াকান্ড বা কীর্তিকলাপ (activities) মাত্র। এই “activities” হয়ে থাকে আমাদের জীবনের ভালো বা মন্দ থাকার অনুভূতি যা শুধু অনুভব করার বিষয়। ভালো অনুভূতিতে শান্তি এবং স্বস্তি, খারাপ অনুভূতিতে অশান্তি এবং অস্বস্তি অনুভব করি। এত কিছুর পরও যে বোধগম্য এবং জ্ঞান আমরা অর্জন করি জীবন চলার পথে তাতে ভালো মন্দের পার্থক্যটি বুঝি এবং জানি। সেক্ষেত্রে সহজ সরল এবং স্বচ্ছ একটি সুন্দর জীবন তৈরি করার মত দক্ষতা আমাদের আছে। জন্মেছি দরিদ্র পরিবারে এটা আমার পছন্দ, বিকল্প বা নির্বাচন (choice) নয়, তবে তার পরিবর্তন, বিনিময় বা বদল (change) করার ‘choice’ আমার আছে। সর্বপরি জন্মেছি যখন পৃথিবীতে মেনে নিতে হবে ডেসটিনিকে। কারণ – “what is looted can’t be blotted.”

লেখক: রহমান মৃধা
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

খেলাপির ফাঁদে ব্যাংক খাত: সমাধান কোন পথে
বাণিজ্যিক বিবেচনায়  ‘সৌরবিদ্যুৎ’ টেকসই এবং অনেক বেশি লাভজনক
কক্সবাজার: বাংলাদেশে অফুরন্ত পর্যটন সুযোগ উন্মোচন
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে
নেট দুনিয়ার ব্যাংকিং
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর
সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ
ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি