রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- নাসির (৩০) এবং মুন্না (২২)। নাসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মুন্নাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং নাসিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত মুন্নার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা এলাকায়। তবে তিনি নানীর পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের শঙ্করে থাকতেন। বাবার নাম বাবুল। মুন্নার আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, নাসির মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের শাহ আলম বিশ্বাসের ছেলে। রায়েরবাজার বারৈইখালী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
নাসিরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা শাওন আহমেদ বলেন, আমি আর নাসির দুই জনে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলাম। আমার গন্তব্য সাদেক খান আড়ৎ এবং নাসিরে গন্তব্য ছিল তিন রাস্তার মোড়। সে আমাকে তিন রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিতে বলে। সাদেক খান আড়তের সামনে থেকে তিন রাস্তার মোড়ে যাওয়ার সময় দেখি ধারালো অস্ত্র নিয়ে একটি গ্রুপ দৌড়াদৌড়ি করছে। তখন তারা পেছন থেকে নাসিরকে এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে।
তিনি বলেন, নাসির মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌড় দিলে আবার তাকে ধরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আক্রমণকারীরা বলে যে, ওকে জবাই করে দে। পরে নাসিরকে জবাই করতে গেলে আমি একজনকে ধরে ফেলি। তখন দুইজনেই পড়ে যাই। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যায়। আমরা নাসিরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায় নাসির।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাওয়ার সময় ওইখানে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। কী কারণে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল তা বলতে পারছি না। নাসির হাজারীবাগ থানার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিল। সে রাজমিস্ত্রির কাজ করত।
নিহতের নাসিরের বড় ভাই ইসলাম বিশ্বাস বলেন, নাসির নির্মাণাধীন কাজে লেবার সুপারভাইজারের কাজ করতো। বিকেলে বাসা থেকে বের হলে খবর পাই, সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্নার বাবা বাবুল বলেন, ৯ মাস বয়েসে মুন্নার মা মারা গেলে নানীর সঙ্গে মোহাম্মদপুর শঙ্কর এলাকা থাকতে শুরু করে। সেখানেই বড় হয়ে বিয়ে করেছে। তার আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, মুন্নার বয়স ৫ বছর হলে তিনি গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে বিয়ে করেন। সেখানে আরও দুটি সন্তান হয়। তবে মুন্নার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ ছিল। একদল লোক তাকে কুপিয়েছে এমনটা শুনে হাসপাতালে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তবে কী কারণে মেরেছে, সেটি বলতে পারেননি।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এস আই) মাসুদ আলম জানান, মোহাম্মদপুর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক) মারা যায় সে। আমরা বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে জানিয়েছি। মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান জানান, মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবীর সাদেক খান আড়তের পাশে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে মুন্না (২২) ও নাসির নামে দুইজন নিহতের খবর পেয়েছি। এদের মধ্যে মুন্না সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং নাসির ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। মুন্নার নামে মারামারিসহ সাত থেকে আটটি মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাসিরের বিষয়ে এখনো তথ্য পাইনি। নাসিরের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। কী কারণে তাদের দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
কাফি