ইবির অধ্যাপক আব্দুল মুঈদের স্মরণে সভা ও শোক পালন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ রহমানের স্মরণে শোক সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় এ বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে মীর মোশাররফ একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলায় শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইবি কেন্দ্রীর মসজিদের খতিব আশরাফ উদ্দিন খান দোয়া পরিচালনা করেন।

এসময় অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তফা আরিফ, অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা, সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহেদ আহমেদ, ড. পার্থ সারথি লস্কর, সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুন্সী মোর্তজা আলী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল, ইইই অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সিদ্দিক বাদশাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাসে শুধু পড়াশোনা নয়, পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন বাস্তবমুখী বিষয় নিয়ে স্যার আমাদের সাথে আলোচনা করতেন। আমরা কোন ধমক ধামকি ছাড়াই একনাগারে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় মনোযোগ দিয়ে স্যারের কথা শুনতাম। স্যার নিজের বেতনের টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য গাছ লাগিয়েছিলেন যেটার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের যেকোন বিপদে আপদে কিংবা যেকোন পরামর্শে নির্দ্বিধায় স্যারের কাছে যেতে পারতাম। স্যার অত্যন্ত যত্নের সাথে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দিছেন। আমরা স্যারের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী মো. সানজিদ আহমেদ সজীব বলেন, স্যার টাইম মেনেজমেন্টের এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন। এমন কোন দিন হয়নি যে তিনি লেইটে ক্লাসে এসেছেন,তিনি যথা সময়ে ক্লাসে এন্ট্রি নিয়ে ক্লাস নেয়া শুরু করে দিতেন। ছাত্র ছাত্রীরাও মূহুর্তেই ক্লাসে মনযোগী হয়ে যেত, পুরো ক্লাসে নেমে আসতো পিনপতন নিরবতা, সবাই যেন উত্তম শ্রোতা।

‘স্যারের কাছ থেকে আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা ছিলো, তিনি প্রসংশার চেয়ে উনার গঠণমূলক সমালোচনা শোনতে পছন্দ করতেন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। অর্থাৎ স্যার প্রতিনিয়তই শিখতেন, এই শিখতে শিখতে স্যার অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছেন, জায়গা করে নিয়েছেন ধর্ম, দল, মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের হৃদয়ে।’

সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহেদ আহমেদ বলেন, ঢাকায় অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকা সত্ত্বেও স্যার কারো মুখাপেক্ষী হবেন না বলে তার মেয়েকে ঢাকায় ভর্তি করেননি। আমার জানামতে তার এক ভাইয়ের ছেলেকে তিনি পিএল থেকে টাকা তুলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য দিয়েছিলেন। এমনকি এই সময়েও আমাদের প্রত্যেক শিক্ষককে ঈদের সালামি দিতেন। সেই মুঈদ স্যার আর নেই, এটা মেনে নিতেই আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা বলেন, সব ধর্মেই বলা আছে যে জন্মিলে মরিতে হবে। মৃত্যুটা অবধারিত, আমরা প্রস্তুত না থাকলেও আমাদের তা মেনে নিতে হয়। অর্থনীতি বিভাগ আজ যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে এর পেছনে অন্যতম কারিগর মুঈদ স্যার। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন জায়গায় বুক ফুলিয়ে চলতাম কারণ আমাদের একজন মুঈদ স্যার আছেন বলে। মুঈদ স্যার আমাদের মাঝে নেই, তাকে ছাড়াই আমাদের ক্লাস নিতে হবে এটা ভাবলে আমাদের হৃদয়ের অন্তস্থলে ঝড় বয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ইবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ রহমান ১১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর৷ তিনি অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট হিসেবে পরিচিত। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং একটি কন্যা সন্তান ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার