প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজরা আবারও এনআরবিসি ব্যাংক দখল করতে মরিয়া

দেশের ব্যাংকিং খাতের চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অরাজকতা, আর অব্যবস্থাপনা ও দুঃশাসনের চরম নজির স্থাপন করেছে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি। যার জন্য ব্যাংকের একক কর্তৃত্ববাদী চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও তার সকল অপকর্মের দোসর এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামকে দায়ী করছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। সেই সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার ভাগ্নি জামাই পরিচয়ে আওয়ামী লীগের খোলসে আবার কিছু প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজ এনআরবিসি ব্যাংক দখলের পায়তারায় লিপ্ত। এটি হলে অব্যাহত থাকবে তমাল-আদনানের ব্যাংক লুটের ধারা। এমতাবস্থায় ব্যাংক রক্ষা ও বর্তমান পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

এদিকে সম্প্রতি বোর্ডের বয়োজেষ্ঠ পরিচালক আবু বকর চৌধুরী চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের বিরুদ্ধে তার অনিয়ম-দূর্নীতি, একচ্ছত্র আধিপত্য ও পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠনে একক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তমাল তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নানাভাবে অপমান করে। এসব কারনে ও চেয়ারম্যানের একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলে সৃষ্ট বাগবিতান্ডার কারণে পরিচালক আবু বকর চৌধুরী আর ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না বলে ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এনআরবিসি ব্যাংকের চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে তাঁরা এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর পাঠিয়েছে। চিঠিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন উদ্যোক্তা পরিচালক সেলিনা ইসলাম এবং ইজহারুল ইসলাম হালদার।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে তমাল-আদনান চক্র ব্যাংকের দখল টিকিয়ে রাখতে সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র পরিচালক সাবেক এয়ার চিফ ও হাসিনার আস্থাভাজন আবু এশরারকে অথবা অপ্রকৃতিস্থ লোকিয়াত উল্লাহ অথবা তার অপর লুটের ভাগিদার আওয়ামী ব্যাবসায়ী ওলিউর রহমানকে অথবা তার বন্ধু শফিকুল আলম মিথুনকে (যে ব্যাংকের লুটপাটের অন্যতম সহযোগী হয়ে আছে) ব্যাংকের ডামি চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে ব্যাংকে তার কর্তৃত্ব ১০০ শতাংশ ধরে রাখতে চায়। অপরদিকে তৌফিক চৌধুরী ফারাসাত আলী সারোয়ার জামান চৌধুরী তোহেল আহমেদ (যার শেয়ার মাত্র ০.২৪%) এরা তৌফিক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে পেছন থেকে শহিদুল আহসান চক্রের ব্যাংক লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়।

এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে যেহেতু চিঠি দেওয়া হয়েছে অবশ্য এটা যাচাই করে দেখবে। প্রয়োজন হলে পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেবে। আর ব্যাংকের পর্ষদ সংশ্লিষ্টরা শেয়ার জালিয়াতি-কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এতে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফারাসাত আলীর হাত ধরে হলেও এর পেছনের মূল কুশীলব ছিলেন তৎকালীন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি তৌফিক চৌধুরীর দুর্ভিসন্ধি ও ব্যাংক লুটের নিখুঁত ছক। আওয়ামী লীগের ব্যানারে সে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নামক একটি ইউনিভার্সিটিও অনুমোদন নিয়ে নেয়, আবার ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকাও বের করে নেয় সেই ইউনিভার্সিটির নামে! সেসময় ফারাসাত আলীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে শহিদুল আহসান ও তৌফিক চৌধুরী (যেহেতু তারা দুজনেই ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক) ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করে ব্যাংকটিকে শুরুতেই ব্যাপক বিতর্কিত করে ফেলে।এই শহিদুল আহসান ও তৌফিক চৌধুরী গং এজি এগ্রো, বেগমগঞ্জ ফিড মিল, ফাস্ট কর্পোরেশন, সালসাবিল অতোর ও বোরকা হাউজসহ বিভিন্ন নামে ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লুটে নেয় যার সবই মন্দ ঋণ। ব্যাংকটির অনুমোদনে কাজ করেছিল প্রয়াত সৈয়দ আশরাফের বন্ধু সানোয়ার আলী, তৌফিক চৌধুরী, ফারাসাত আলী, শহিদুল আহসানসহ অনেকেই। পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফের বন্ধু সানোয়ার আলীকে ২৫০০০ শেয়ার গিফট হিসেবে দিয়ে তাকে ভাগিয়ে দেয় এই চক্র। আর নিজেরা মেতে উঠে ব্যাংক লুটের এক উদ্দম খেলায়। এতে আরো যুক্ত ছিলেন ফারাসাত আলী গ্রুপের ভাইগ্না-ভাতিজা মিলে প্রায় ১২ জন আর তৌফিক চৌধুরীর ছেলে তানভীর চৌধুরী, আত্মীয় তোহেল আহমেদসহ অনেকেই। তারা অন্য স্পনসরদের কাছ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে ফারাসাত আলী-শহিদুল আহসান-তৌফিক চৌধুরী গং তাদের বলয়ের প্রায় ২৫ জনকে ব্যাংকের স্পনসর পরিচালক বানান। আর এই চক্রের মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন সমস্ত ছাত্রলীগ পন্থী কর্মকর্তাদেরকে এই ব্যাংকে ২-৩ টা পোস্ট ও ব্যাপক আর্থিক সুবিধা দিয়ে এই ব্যাংকে বসিয়ে ব্যাপক লুটপাটে ব্যস্ত হয়। যার কারণে ব্যাংকটিতে শুরুতে অন্য কোনো ব্যাংকের যোগ্য কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এভাবেই ব্যাংকটি শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি মাধ্যমে হোঁচট খায়। আর শহিদুল আহসান সরাসরি ব্যাংকের পরিচালক না হলেও ছদ্দাবরণে ব্যাংকটির ৪/৫ টি বড় শেয়ারের কর্তৃত্ব তার হাতেই থেকে যায়, যেমন এবিএম আব্দুল মান্নান, কামুরুন নাহার সাকি ইত্যাদি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাংক লুটের খবর পেয়ে বাইরে থেকে ছুটে আসে ভুয়া রাশিয়ান অলিগার্ক পারভেজ তমাল। যদিও সে রাশিয়াতে অবৈধ জুয়ার ব্যাবসায় জড়িত থাকার কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পেয়ে রাশিয়া থেকে বিতাড়িত হয়। দেশে ফিরে পারভেজ তমাল ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করে আলোচিত পাপিয়া কান্ডের অপারেটর হিসেবে হানি ট্র্যাপিং এর কাজ করতো যার মাধ্যমে সে কোটি কোটি টাকা অর্জন করে। কিন্তু পুলিশ আর সেনা বাহিনীর কানেকশন থাকার কারণে সে ১ কোটি টাকা দিয়ে নিজের নাম কাটাতে সক্ষম হয়। পরে এই পারভেজ তমালের সাথে যুক্ত হয় আরেক ব্যাংক লুটেরা মাস্টারমাইন্ড আদনান ইমাম। দুজনের এই লুটের মহাপরিকল্পনা তখন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। তারা তখন র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসানের সাথে লিংক করে ভারী মেশিনগান নিয়ে ব্যাংকের বোর্ডে ঢুকে বোর্ড মেম্বারদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাংক দখল করার চেষ্টা করে, এটা ছিল ২০১৬ সালের কথা। এর বিপরীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও চলমান ছিল যে মামলাটি তারা ব্যারিস্টার তাপসকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। তাদের এসব ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয় আরেক আওয়ামী পন্থী ব্যাংক লুটেরা সিলেটের ওলিউর রহমান ও জাকারিয়া খান নামক আরেক আওয়ামী ব্যাবসায়ী। তারা তখন ব্যাংক দখলের জন্য শেখ সেলিমের শরণাপন্ন হয় এবং বছরে ১০০ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে আমাদের ব্যাংকটি তমাল-আদনান লুটেরা চক্রকে সেলিম বুঝিয়ে দিতে সম্মত হয়।

পরবর্তীতে এসব আওয়ামী আশীর্বাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরকে দুই বিফকেস দুবাই গোল্ডের মাধ্যমে বশীকরণ করে ও রাশিয়াতে নিয়ে বিশেষ সেবা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ফজলে কবির সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতকে দিয়ে ব্যাংকের কতৃত্ব তমাল আদনান লুটেরা চক্রের হাতে তুলে দেয়। আর মিডিয়া কভারেজ দেওয়ার জন্য দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার এক সাংবাদিককে ২ কোটি টাকা দেয়। এভাবেই হয়ে যায় তমাল-আদনানের এনআরবিসি ব্যাংক রাজত্ব ও বলাৎকার। অবস্থাদৃষ্টি মনে হয় ব্যাংকটি যেন চোরের কবল থেকে বেঁচে ডাকাতের হাতে পড়েছে। আর এভাবেই শুরু হয় তমালের দানবীয় উত্থান! আর সে সবচেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে সাবেক গভর্নর রউফ তালুকদারের ছত্রছায়ায়। রউফ তালুকদার তার একমাত্র ভগ্নিপতিকে ব্যাংকে নিযুক্ত করে তার ক্যাশিয়ার হিসেবে যাতে করে সে প্রতিদিনই ব্যাংক থেকে নগদে ১০ লক্ষ টাকা করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যেত গভর্নরের জন্য। তার ভগ্নিপতি এখনো ব্যাংকের কোম্পনী সেক্রেটারি থাকাতে ও তমালের হাতে এখনো ব্যাংকের কর্তৃত্ব থাকাতে এই দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলে সহজেই অনুমেয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এম সাইদুর রহমান বলিষ্ট ভাবে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সেসময় ব্যাংকটিকে ফারাসাত-তৌফিক-শহিদুল আহসান-পাপুল চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করে ব্যাংকটিকে লুটেরা মুক্ত করেন। তার সাথে ছিলেন বর্তমানের আরেক পরিচালক লোকিয়াত উল্লাহ ও আরজু, তারা বরাবরই অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু মুখোশ ধারী এই লুটেরা তমাল-আদনান গংয়ের কীর্তিকলাপ সেইসময় তারা বুঝে উঠতে না পারলেও পরবর্তীতে যখনি তারা বুঝতে পারেন তখন এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদেরকে বোর্ডে কোনঠাসা করে ফেলা হয় ও নানাভাবে হয়রানি করা হয় এবং হচ্ছে। তমাল-আদনান এই লুটেরা চক্রের সাথে আরো আছে আওয়ামী পন্থী ব্যাবসায়ী শফিকুল মিথুন, রাসেল আহমেদ লিটনসহ অনেকেই।

এছাড়াও, সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলাসহ ২৭টি খুনের মামলার আসামি জুয়েল হোসেন শ্রাবন নামে এক দাগি সন্ত্রাসীর সাথে তমালের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে এবং তার মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়সহ প্রায় ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে দিয়ে তমালের ব্যাংক পরিচালনা ও লুটের রাজত্ব গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে চিঠিতেবলা হয়, এই চক্রকে ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে ২ কোটি টাকা করে দেওয়া হতো যা ব্যাংকের সিএসআরের টাকা থেকে খরচ দেখানো হতো। তার এসব চক্রের সাথে আরো জড়িত ছিল শিবলী রুবায়েত, নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক ইলিয়াস খান, সাংবাদিক মইনুল হাসান সোহেল, ইত্যাদি যারা তমালের সমস্ত কুকীর্তি ঢেকে রাখতো। এবং এখনো ব্যাংকে ৪/৫ জন সাংবাদিককে নিয়োগ দেওয়া আছে যাদের মাধ্যমে সে মিডিয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক কন্ট্রোল করছে আর টাকা যাচ্ছে ব্যাংকের তথা আমাদের সাধারণ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের টাকা। আর এসব কাজে সহায়তা করছে ব্যাংকের ডিএমডি হারুনুর রাশিদ, ডিএমডি কবির আহমেদ, ডিএমডি হুমায়ুন কবির, ডিএমডি রবিউল ইসলাম, এসইভিপি সাফায়েত কবির কানন ও রবিউল ইসলাম, এসভিপি পারভেজ হাসান ও দিদারুল হক মিয়া, ভিপি জাফর হাওলাদার ও জামির উদ্দিন সহ ব্যাংকের মানাজেমেন্টের অধিকাংশ সিন্ডিকেটেড লুটের টাকা ভাগাভাগির মাফিয়া চক্র। এছাড়াও তমাল-আদনান লুটেরা চক্রে আরো যুক্ত আছে শিবলী রুবায়েত মনোনীত আওয়ামী দালাল রাদ মুজিব লালন, আবু এশরার, আব্দুল মান্নান নামক কিছু চাটুকার স্বতন্ত্র পরিচালক যারা তমালের কাছ নিয়মিত ৫ লাখ টাকা করে মাসোহারা সহ ব্যাংক লুটের ভাগ। এই কুখ্যাত চেয়ারম্যান আওয়ামী দালাল, তথাকথিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ-রাশিয়ার সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী ডোনার, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী বাহিনীর অর্থায়নকারী, ব্যাংক লুটেরা, সংগবন্ধ ব্যাংক লুটেরা চক্রের মাধ্যমে ব্যাংকের ৭,৭০০ কোটি টাকারও বেশি লুটপাট ও পাচারকারী পারভেজ তমাল ও তার লুটেরা সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী এক্সিকিউটিভ কমিটির লুটেরা চেয়ারম্যান আদনান ইমাম। সদ্য সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের উচ্চমহলের আনুকল্য গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকের অভ্যন্তরে ২০১৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, নামে-বেনামে ভুয়া কোম্পানি সৃষ্টি করে ব্যাংকের টাকা তছরুপ ও বিদেশে পাঁচারকারী, ব্যাংকে টর্চার সেল খুলে নিরীহ কর্মকর্তাদের নির্যাতন, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতির অভয়ারন্য তৈরি করেছেন। তাদের এই লুটতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকের সিনিয়র ম্যাজেনমেন্ট ও কতিপয় শাখা ব্যবস্থাপকের যোগসাজশে সংঘবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতি চক্র বা অর্গানাইজড ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

এতে বলা হয়, ব্যাংকের প্রকৃত শ্রেণীকরণের পরিমান প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যার ৭০ শতাংশই তমাল-আদনান ও শেখ সেলিম চক্রের অধীনে আছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত শ্রেণীকরণ ও লুটপাটের প্রকৃত অবস্থা জানতে হলে তমাল-আদনান ও তার অধীনস্ত পাচাটা, লুটের ভাগিদার ম্যানেজমেন্টকে অবিলম্বে অপসারণ করে নিরপেক্ষ একটি নিরীক্ষা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তমালের নিজস্ব অধীনস্ত কোম্পনি এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকে প্রায় ৫০০০ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২০০০ ছাত্রলীগ কর্মী আছে। এসব নিয়োগের বিপরীতে ৩ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে এবং এসব কর্মকর্তাদের বেতনের একটি অংশ (যেটি প্রায় মাসে ৫ কোটি টাকা) তমাল সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে।

আলোচিত শিবলী রুবায়েত-সাকিব আল হাসান-আবুল খায়ের হিরু-আদনান ইমাম-তমালের ভাই ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ সাব্বির আহমেদ এই চক্রের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজি করে নিজেরা প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা লুটপাট করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ব্যাংকের পরিচালকদের একাংশ। তাদের দাবি, ব্যাংকটিতে তৌফিক চৌধুরীর নেতৃত্বেও একটি শেয়ার কারসাজির চক্র আছে যেটি পরিচালনা করে আসছে ব্যাংকের শেয়ার ডিভিশনের প্রধান ভিপি রহুল আমিন ও ব্যাংকের বর্তমান-সাবেক কোম্পানি সেক্টরেটরিরা। এই চক্রের কাছে আছে ওবায়দুল কাদের, বাহাউদ্দিন নাসিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাসুদ বিশ্বাসের মতো লোকেদের ঘুষের অর্থের পোর্টফোলিও। সেই টাকায় তৌফিক চৌধুরী চেয়ারম্যান বনে যেতে মরিয়া। এসব কিছুর প্রতিবাদ করে ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এম সাইদুর রহমান ও বর্তমান পরিচালক লোকিয়াত উল্লাহ ও আরজুসহ অনেকেই তমাল-আদনান লুটেরা চক্রের রোষানলে পড়েছেন।

আরো কয়েকটি শেয়ারের ব্যাপারে অনেক সমস্যা ও ফান্ডের উৎস সম্পর্কিত প্রশ্ন থেকেই যায়, যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকেরও প্রশ্ন আছে আমির হোসেন, এনায়েত হোসেন ইত্যাদি প্রমুখ। এনায়েত হোসেনের শেয়ারটির মূল মালিক খান সন্স গ্রুপ এর কর্ণধার মজিবুর রহমান খান কিন্তু উনি মারা যাওয়াতে তার শেয়ারটি মূলত: দখল করে আছে এই এনায়েত হোসেন যা নিয়ে এখনো আদালতে মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এছাড়াও মামুন মুছে নামের এক ব্যক্তির শেয়ার সেই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে সারওয়ার জামান চৌধুরী নামে একজন দখল করে আছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এই এনায়েত হোসেন ও সারওয়ার জামান চৌধুরী যারা পূর্বের বোর্ডের ফারাসাত-তৌফিক গংয়ের দুর্নীতির সুবিধাভোগী ছিল তারাই এখন আবার তৌফিক চৌধুরীর আত্মীয় তোহেল আহমেদ (যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন কৃতি সন্ত্বন, আওয়ামী ডোনার আজম জে চৌধুরীর ভাতিজা এখন আবার ভোলপাল্টি দিয়ে বর্তমান অর্থ উপদেষ্টার ভাগ্নি জামাই পরিচয়ে ব্যাংক দখলের খেলায় লিপ্ত।) এর মাধ্যমে ব্যাংকের দখল ও লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। এছাড়াও আরেক কুশীলব সারওয়ার জামান চৌধুরী কোনো একজন সেনা কর্মকর্তাকে সামনে রেখে তাকে দিয়ে ব্যাংকের দখল নিতে মরিয়া অথচ এই সারওয়ার জামান চৌধুরীর শেয়ারটিও তার নিজের না আবার তার ২% + শেয়ারের ও ধারক না। এভাবেই সবাই লুটপাটের মহড়ায় লিপ্ত। আরেক আওয়ামী পন্থী লুটেরা পরিচালক ওলিউর রহমান তমাল আদনান লুটেরা চক্রের অন্যতম সহযোগী। তারাও সব কিছুর ভাগ প্রতিনিয়ত পেয়েই যেত এবং যাচ্ছে আবার পুনর্গঠিতব্যঃ বোর্ডে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব।

বর্তমান পর্ষদ ভেঙে ব্যাংকটি পুনর্গঠনের দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, অবিলম্বে এসব লুটেরা, আওয়ামী দালাল ও ব্যাংক থেকো দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তমাল আদনান-তৌফিক-ফারাসাত-সারোয়ার-তোহেল (কথিত ভাগ্নি জামাইবেশী মাস্টারমাইন্ড)-সানোয়ার-এনায়েত-আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী জাকারিয়া খান-শহিদুল আহসান- মামুন চৌধুরী আবু এশরার শফিকুল মিথুন প্রমুখ লেবাসধারীদের হাত থেকে আমাদের ব্যাংকটি বাঁচান এবং এদেরকে আর কোনোভাবেই ব্যাংক পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ করছি। তাই ব্যাংকটির দুর্নীতির ধারা বন্ধ করতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যাংকটির বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্থ ও চরম নৈরাজ্যে পরিপূর্ণ বোর্ডটি অবিলম্বে ভেঙে দিয়ে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরিচালকের নেতৃত্বে ব্যাংকটি পুনর্গঠন এখন ব্যাংকটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী ও পরিচালকদের জোরালো দাবি বেগবান রয়েছে।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার