এস আলম গ্রুপের নামে–বেনামে থাকা সব ঋণসুবিধা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের সকল আমানতের টাকাও উত্তোলন করতে পারবে না গ্রুপটি। এমনকি তাদের নামে থাকা কোনো ক্রেডিট কার্ড দিয়েও লেনদেন করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানায় থাকা ছয় ব্যাংককে এ নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও কমার্স ব্যাংক। এসব ব্যাংকসহ অন্য যেসব ব্যাংকে গ্রুপটির নামে-বেনামে ঋণ রয়েছে, সেগুলোতেও নজরদারি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে, যারা ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন শুরু করেছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ইতিমধ্যে ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত করেছে। এরপরই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশনা দেয়। অন্যান্য ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে যেসব ঋণ রয়েছে, সেগুলোর জন্যও একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে গ্রুপটির নামে-বেনামে থাকা ঋণের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশ্রয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে টাকা তুলে নেয় গ্রুপটি। এখন সরকার পরিবর্তন হওয়ায় তারাই বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে আহসান এইচ মনসুর যোগ দেওয়ার পর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে
ব্যাংকগুলোকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে–বেনামে কোনো নতুন ঋণসুবিধা দেওয়া যাবে না। তাদের আগের ঋণগুলোও নবায়ন করা যাবে না। এসব প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপের নামে অনুমোদিত ঋণ ও ঋণসীমা বিদ্যমান থাকলেও তার বিপরীতে কোনো ধরনের উত্তোলন সুবিধা দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এসব হিসাব থেকে নগদ উত্তোলন, স্থানান্তর বা অন্য যেকোনোভাবেই টাকা সরানো যাবে না। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান–গ্রুপের নামে অনুমোদিত ঋণপত্র বা গ্যারান্টির মেয়াদ থাকলেও এর বিপরীতে নতুন করে সুবিধা দেওয়া যাবে না।
তবে আগে ঋণপত্র খোলা হয়েছে, এমন দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব, রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা অথবা টাকার আমানত হিসাবে থাকা অর্থ ব্যবহার করা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের যেকোনো ধরনের বিল কেনা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনো পুনঃ অর্থায়ন সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ক্রেডিট কার্ড থাকলে টাকা বা বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
তবে প্রতিষ্ঠানের যেকোনো হিসাবে টাকা জমা করা যাবে। এস আলমের নামে ও বেনামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে আমানত জমা থাকলে, তা থেকে কোনো ধরনের টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে সম্পূর্ণ নিজস্ব উৎস থেকে শতভাগ নগদ অর্থ জমা সাপেক্ষে ঋণপত্র খোলা যাবে।
ঋণের তথ্য চেয়ে চিঠি
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তাঁর ভাই ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ ও আমানতের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে সাইফুল আলমের পাশাপাশি তাঁর ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, আবদুস সামাদ, রাশেদুল আলম, সহিদুল আলম, মোরশেদুল আলমের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও তাঁদের দুই ছেলে আহসানুল আলম এবং আশরাফুল আলমরন তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাইফুল আলমের ভাইদের পরিবারের সদস্যদের আমানত ও ঋণ হিসাবে কত টাকা স্থিতি আছে, তা জানতে চেয়েছে বিএফআইইউ।
ব্যাংক খাতের সূত্রগুলো বলছে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এস আলমের নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ দুই লাখ কোটি টাকা হবে, যা ফেরত দিচ্ছে না। ফলে এসব ঋণের তদারকির জন্য এখনই বিশেষ উদ্যোগ না নিলে খাতটি আরও খারাপ হয়ে পড়বে। ২০১৭ সালে প্রথম ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। এরপরই উত্থান শুরু হয় এই গ্রুপের, যাতে সমর্থন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা।
এসএম