আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। দুর্গত ও অসহায় মানুষের সেবা-সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সংগঠনটিই আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতেও উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় থেকে তুরস্ক–সিরিয়া ভূমিকম্পের সময়ে তুরস্কে সহায়তা পাঠানো ও এখন পর্যন্ত দেশের বন্যার্তদের মধ্যে জরুরী ত্রাণ বিতরণ, ক্ষুধার্তদের মধ্যে অন্ন বিতরণ ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ নানা সেবামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি।
ভারি বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বিপর্যস্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে শায়খ আহমাদুল্লাহ আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ত্রাণের পাহাড় নিয়ে বন্যার্তদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার একদিনে ২০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। প্রতিদিন বাড়ছে এই হিসাব। তাছাড়া ত্রাণ সামগ্রী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও বহুভাবে গোছানো সব উদ্যোগ নিচ্ছে ফাউন্ডেশনটি। হাজার হাজার ভলান্টিয়ার আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করছে এই দুর্যোগ মোকাবিলায়। শুধু মুসলিমরাই না, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এবার ডোনেশন করেছেন এখানে। তারাও ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করেছেন।
দেশে চলমান এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪৯ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে অরাজনৈতিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নিয়েছে ১০ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণের। চরম দুর্দশায় দিন পার করা বন্যার্তদের জন্য ৫০০ টন ত্রাণ বিতরণ প্রস্তুত করছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ গণমাধ্যম ও নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, আমরা তিন ধাপে এবার ত্রাণ বিতরণ করবো। এছাড়া পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবো।
শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, যেহেতু এখন রান্না করার পরিস্থিতি নেই, সেহেতু প্রথম ধাপে ২০ হাজার পরিবারের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম ধাপের কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে আজ। এ ধাপে দুই কেজি খেজুর, দুই কেজি চিড়া, এক কেজি লবণ ও এক কেজি চিনি দিচ্ছি। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উদ্ধার তৎরতা, যা প্রশিক্ষিত ও সংশ্লিষ্ট ইকুইপমেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়। এ কাজটি বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীসহ অনেকে করছেন। স্থানীয়ভাবেও যার যার জায়গা থেকে সবাইকে উদ্ধার কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।
দ্বিতীয় ধাপে আমরা আরও ৫০ হাজার পরিবারের জন্য শুকনো ও ভারী ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করছি। যার জন্য ৫০০ টন মালামাল কেনার কাজ সম্পন্ন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে ২০০ টন চাল, ২০ হাজার বোতল তেল (২ লিটার), ৩০ টন খেজুর, ৩০ টন চিড়া, ৪০ টন ডাল, সাড়ে ২৭ টন লবণ, ১৫ টন চিনি, ২০ হাজার পিস পানির বোতল (৫ লিটার) এবং দেড় লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মোমবাতি ও দিয়াশলাই। আর তৃতীয় ধাপে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ৪ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা থাকলেও সেটাকে বাড়িয়ে ৫ হাজার করা হয়েছে। ঘরহারা ৫ হাজার পরিবারকে টিন ও নগদ অর্থসহায়তা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন হলো বাংলাদেশ-ভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক ধর্মীয় দাতব্য সংস্থা। এটি শিক্ষা, দাওয়াত ও মানবকল্যাণসহ নানা বিষয়ে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশী ইসলামি পণ্ডিত শায়খ আহমাদুল্লাহ এটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং শুরু থেকেই তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে এটি পরিচালনা করছেন। এই সংস্থার অধীনে আস-সুন্নাহ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ও মাদরাসাতুস-সুন্নাহ নামক মাদ্রাসা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়াও সংস্থাটি বন্যার্তদের মধ্যে জরুরী ত্রাণ বিতরণ, শীতার্তদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, ক্ষুধার্তদের মধ্যে অন্ন বিতরণ ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ নানা সেবামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
আহমাদুল্লাহ সংগঠনটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করলেও ২০১৮ সালে সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি দাওয়াহ কেন্দ্র থেকে অব্যাহতি নিয়ে দেশে ফিরে এসে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেন। এবং ২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে পেইজ খুলে কার্যক্রমের প্রচার করতে থাকেন।
২০২০ সালের করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় সংগঠনটি দাতব্য কার্যক্রম প্রশংসিত হয়। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দিলে সংগঠনটি সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও চট্টগ্রামে বন্যার্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে সহায়তা করে। ২০২৩ তুরস্ক–সিরিয়া ভূমিকম্পের সময়ে তুরস্কে শীতবস্ত্র পাঠায় সংস্থাটি। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানাস্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করে। সংস্থাটি সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছে। এছাড়াও সংস্থাটি নগদ অর্থ বা কাজ করার যন্ত্র কিনে দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং সারাদেশে কুরবানির মাংস বিতরণ করে থাকে।
এছাড়াও, সংস্থাটি একটি দাওয়াহ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকে, আলেমদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি রয়েছে। আস সুন্নাহ পাবলিকেশন থেকে শায়খ আহমাদুল্লাহ নিজে চারটি বই পাবলিক হয়েছে। সংস্থাটি ২০২১ সালে নবীন উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সম্মাননা’ নামক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং ৫০ জন উদ্যোক্তাকে পুরষ্কিত করা হয়।
এসএম