ক্যাটাগরি: আইন-আদালত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চার হত্যা মামলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসব মামলা হয়। আদালত চারটি মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। এছাড়াও রয়েছেন সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ মোট ১১৬ জন।

শেখ হাসিনা-বিচারপতি খায়রুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে করা গুলিতে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদার নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালতে এ মামলা করেন নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা। এদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নির্দেশে অন্যসব আইনজীবী তথা অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। তার রায় আদালতের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে দেশে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র কায়েমপূর্বক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দেয়।

পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিরা যেনতেনভাবে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জাল ভোট, মৃত ব্যক্তির নামে ভোট প্রদান করে। নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় গণমানুষের স্বাভাবিক উপস্থিতি ছাড়াই কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা খর্ব করাসহ খুন, গুম ও ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা ও নিষ্পেষণ অব্যাহত রাখে।

একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সরকার হত্যা, গুম ও গ্রেফতারের মাধ্যমে দমন-পীড়ন করলে আন্দোলনকারীরা সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে তাদের পাশে সার্বিক অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নির্দেশে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ কিছু বিপথগামী সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা দেশব্যাপী আন্দোলন দমনের জন্য ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে।

আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফিরোজ তালুকদার মিরপুর-১০ গোলচত্বর অতিক্রম করার সময় র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাসেল মিয়া খুন: শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় রাসেল মিয়া নামে একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রামপুরা থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন– সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই দুপুর আড়াইটায় আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের গুলিতে মারা যান রাসেল মিয়া।

শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান খুন: শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুল আরেফিন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাইদ খোকন ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই লক্ষ্মীবাজার এলাকায় জুমার নামাজ আদায়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতা বৈষম্যবিরোধী মিছিল শুরু করেন। বৈষম্যমুক্ত একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তারা রাজপথে অবস্থান করে স্লোগান দিতে থাকেন। আসামিরা গণভবনে বসে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। এরপর নামীয় আসামিরাসহ আরও ৫০/৬০ জন অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসী দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ এবং পুলিশ বাহিনীর মাঠ স্তরের ৬০/৭০ জন সশস্ত্র সদস্য একযোগে শান্তিপ্রিয় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এলেম আল ফায়দি নামে একজন শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান সরকারি কবি নজরুল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি লেগে তার মাথার মগজ বের হয়ে আসে।

শিক্ষার্থী হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক। তাকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নিঝুম মজুমদার ও মুনতাসীর মামুনসহ ৪৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নিহতের বড়ভাই তারিকুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাদেক খান, শাজাহান খান প্রমুখ।

গত ৪ আগস্ট তেজগাঁও থানার ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচের সড়কে গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার