বকেয়া বেতন আদায়ে এবং কারখানা খুলে দিতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকেরা। সোমবার (১৯ আগস্ট) গাজীপুরের কে বি বাজার এলাকার ছয়দানায় অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানা প্রাঙ্গনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় তাদের ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, মালিক চোরা গেলি কই’; ‘মালিকের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’; ‘মালিকের চামচারা, হুশিয়ার সাবধান’;‘দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরে যাবো না’; ‘বেতন-ভাতা না নিয়ে, ঘরে ফিরে যাবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব জামালউদ্দিন ভুঁইয়া অর্থসংবাদকে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে আমরা অবগত। তবে তারা ঠিক কত মাসের বকেয়া বেতন পাওনা আমার জানা নেই। কিছু পরিমাণ টাকা পাওনা আছে বলে জানি। মূলত, আমাদের কোম্পানির হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই বলে তা পরিশোধ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সমাধানের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বর্তমানে দেশের বাহিরে আছেন। তাদের সাথে কথা বলে শিগগিরই আমরা তাদের দাবি-দাওয়া পূরণে একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করবো।
এদিকে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি গ্যাস-বিদ্যুতের জোগান কমে আসার কারণ দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক। উৎপাদন চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে জামালউদ্দিন অর্থসংবাদকে বলেন, আমরা এখনো গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে নতুন করে উৎপাদন শুরু করবো।
লোকসানি কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তরের পরিকল্পনা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের কোম্পানি সচিব বলেন, আমরা আপাতত এমন চিন্তা করছি না। বরং উৎপাদন চালুর ব্যাপারে মনযোগ দিচ্ছি। কীভাবে সহসা চালু করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করছি।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে নানান পেশার মানুষ। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা আদায়, অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত বেশ উল্লেখযোগ্য। এবার বকেয়া বেতনের আদায় এবং কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের কর্মীরা।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠোনো হয়। বিএসইসির আইন বলছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থতা, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেছে এমন কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। একইসাথে তাদের বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, গত দুই বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক। ফলে নিয়ম মোতাবেক কোম্পানিটি জেড ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির তালিকায় অবস্থান করছে। এছাড়া আগের দুই বছরেও শেয়ার প্রতি নামমাত্র ১ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। তাতে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমায় গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫২ টাকা কমেছে।
এদিকে উৎপাদনহীন এই কোম্পানিতে লোকসান ঝেঁকে বসেছে। ২০২২ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। গত ২০২৩ হিসাব বছর শেষে এই লোকসানের পরিমাণ আরও সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে। সমাপ্ত বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৯ টাকা ০৩ পয়সা। এছাড়া চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৩১ পয়সায়।
আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি এখনো করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণকে দুষলেও আদতে তার তেমন কার্যকারিতা নেই। বরং দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ এবং তা শুরুর যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে লোকসান আরও পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সবশেষ ঘোষণায় গ্যাস-বিদ্যুতের জোগানের অভাবকে দায়ী করলেও এখন পর্যন্ত উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে কোন স্পষ্ট তথ্য জানায়নি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক।
এমআই