ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পাল্টা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পূর্বঘোষিত নির্দেশনা মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে সমবেত হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ও পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে সমবেত হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে; গোপালগঞ্জের গোলাপী, আর কতকাল জ্বালাবি; আয়নাঘরের আয়না বিবি, আর কতকাল জ্বালাবি; ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে সাইজ কর; দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত; রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায় ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এদেশে অগণিত মানুষ হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড, ১৮ সালের কোটা আন্দোলন, আয়নাঘরের নির্যাতন শেষে এইবারে এসে স্বৈরাচারের সম্পূর্ণ রূপ দেখিয়েছে হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের রক্তে খুনি হাসিনার হাত রঞ্জিত। সে যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন আমরা তাকে টেনে বের করে এসে বিচারের মুখোমুখি করবো। বীরের বেটি হলে দিল্লীতে পালিয়ে না থেকে দেশে ফিরে আসুক। বাংলার জনগণ তাকে দেখিয়ে দেবে সে দেশে থাকতে পারে কিনা। অবিলম্বে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে।
ছাত্র ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে, এ বিপ্লব যেন বেহাত বিপ্লবের রূপান্তরিত না করি। ভবিষ্যতে আমাদের উত্তরসূরীরা যেন ইতিহাসে এই ছাত্র আন্দোলনকে ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবেই যেন জানে, বেহাত আন্দোলন হিসেবে নয়।
অতি পিরিতের কারণে আপনাকে একমাত্র ভারত জায়গা দিতে পারে, অন্য কোন রাষ্ট্র স্বৈরাচারকে জায়গা দিবে না, দিবে না। বাইরে থেকে যতই ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা করেন না কেনো এদেশের ছাত্রসমাজ রুখে দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে৷ আমরা আগস্ট মাস জুড়ে কর্মসূচি পালন করবো যেন বিদেশে বসে, ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ যেন অপপ্রচার চালানোর সুযোগ না পায়।
নির্বাচন নিয়ে তারা বলেন, ভারত কে? এদেশের নির্বাচন একদিনের মধ্যে হবে নাকি তিন মাসের মধ্যে হবে নাকি তিন বছরের মধ্যে হবে সেটা ঠিক করবে এদেশের ছাত্রজনতা। ভারত কে এদেশের নির্বাচন ঠিক করার?
ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ১৫ আগস্টের সুযোগ নিয়ে চব্বিশের পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়৷ ওই স্বৈরাচারী সরকার দলীয়করণ করে প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আপনারাও একই কাজ করলে আপনাদেরও নামিয়ে দেওয়া হবে। আমরা চোখ কান খোলা রেখে স্বৈরাচারীর দোসরদের মোকাবেলা করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে বেশ কিছু সুবিধাবাদী লোকজনের তৈরি হয়েছে যারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছে। আমরা যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করেছি তারা কেউ এই পরিচয় সুযোগ সুবিধা নিতে পারে না। আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই সমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ যদি বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে আপনারা তাকে গণধোলাই দিবেন। স্বৈরাচারী হাসিনাকে আপনারা যেভাবে পতিত করেছেন, এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকেও সেভাবে প্রতিহত করবেন।
এমআই/সাকিব