গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যের শিকার কর্মীদের গণঅবস্থান

দেশের শীর্ষ মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বৈষম্যের শিকার কর্মীরা। গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যের শিকার ২০২ স্থায়ী কর্মীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার বেতন-ভাতা বন্ধ করা সহ অন্যান্য সকল আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তারা।

বৈষম্যের শিকার কর্মীরা কিভাবে গ্রামীণফোন বেআইনি ও অবৈধ ভাবে কয়েক হাজার স্থায়ী কর্মীদের জোরপূর্বক বাধ্যতামূলক অবসর বাস্তবায়ন করছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বৈষম্যের শিকার কর্মীরা বলেন, বাংলাদেশে বার বার আইন লঙ্ঘন করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক কোন রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না তাই গ্রামীণফোন আইন লঙ্ঘন এবং বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়েই যাচ্ছে। কর্মী ছাটাইয়ে নীল নকশা সামনে রেখে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর পরির্বতে সন্তায় তৃতীয় পক্ষ ভেন্ডরের অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করার ফলে দিন দিন নেটওয়ার্ক সার্ভিস ও গ্রাহক সেবার মান আজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যাহা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন এর ২০০১ সুস্পষ্ট লজ্জান।

তারা বলেন, গ্রামীণফোন ২০১২ সালের ২৫ মে শুধু মাত্র ট্রেড ইউনিয়ন আবেদন করার অপরাধে ২১৩ জন কর্মীকে অন্যায় বেআইনীভাবে কোন রকম আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি চাকরিচ্যুত করেছিল। এদের মধ্যে থেকে ২২ জন কর্মী এই অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতি মাতানত না করে আপসহীন থেকে বিগত ১৩ বছর ধরে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিভিন্ন আদালতে আইনি যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। এ ফ্যাসিস্ট ও লিয়াজুবাজ গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিগত সরকারের সাথে আঁতাত করে, আইনের প্রক্রিয়া গুলোকে সুকৌশলে প্রলম্বিত করছে বছরের পর বছর ধরে। তাই আজ আমাদের নজির বিহীন বৈষম্যের প্রতিবাদে গণআবস্থান কর্মসূচি।

উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারীর সময়ে গ্রামীণফোনের ব্যবসা প্রসার ও মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও বিগত ২৩ এপ্রিল,২০২০ মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক সাধারণ শাখা হইতে পত্র মারফত জানানো হয়েছিল যাতে শ্রমিক ছাটাই চাকুরীচ্যুতি বন্ধ রাখা হয় যার স্মারক নম্বরঃ ৪০.০১.০০০০.১০২,২৭.০৩০.১৮.৭৭৯। ২১ জুন,২০২১ সালে করোনা দ্বিতীয় ঢেউ যখন তুঙ্গে সম্পূর্ণ দেশ যখন স্থবিত ছিল, সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে এই ফ্যাসিবাদ গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ অন্যায় বেআইননি ও অসৎ উদ্দেশ্যে ১৫৯ জন কর্মীকে একসাথে ছাঁটাই করে। যদিও উল্লেখিত কর্মীদের একটি মামলা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ছিল। কিন্তু এই স্বৈরাচার ম্যানেজমেন্ট বিগত সরকারের আইন আদালত নিয়ন্ত্রকারী অনুঘটকদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে লিয়াজুর মাধ্যমে বিচারাধীন প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গালি দেখিয়ে এই অন্যায় করেই চলছিল ক্রমাগতভাবে।

‘বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের পরেও আমরা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হতে ন্যায়ের পক্ষে রায় প্রদান করে। মহামন্য আপিল বিভাগের রায়কে সম্মান না দেখিয়ে এই স্বৈরাচার ম্যানেজমেন্ট ১৫৯ জনের কাজ ফেরত না দিয়ে নব্য অপকৌশল আশ্রয় নিয়ে কোর্টকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে এবং মহামান্য আপিল বিভাগের রায়কে পাশ কাটিয়ে অন্য এক মামলার মাধ্যমে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। যাহা গণপ্রজন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান এর ধারাঃ ১১১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই আজ আমাদের এই বৈষম্য নিরশন কল্পে প্রতিবাদে রাস্তায় নামা এবং ন্যায় বিচার নিশ্চত করা এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্টা করা।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবি করে তারা বলেন, মহামান্য আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়ন না করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ যে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করিয়াছে তা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও সরকারের প্রতি অসম্মানজনক ও ন্যাক্কারজনক। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের এই বেআইনী ছাটাই, অবৈধ লক- আউট ও অসৎ শ্রম আচরনসহ সকল অবৈধ ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের বিষয়ে তদন্তপূর্বক গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে বেআইনী ছাটাইয়ের শিকার ২০২ জন কর্মীকে তাদের স্বীয় কর্মে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদানের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার