ক্যাটাগরি: মত দ্বিমত

নতুন প্রজন্মের গণতন্ত্রের নবজাগরণ

বাংলাদেশে নতুন গণতন্ত্রের যে ঢেউ উঠেছে, এটি কীভাবে কার্যকর করা যায়? কিছু সমস্যাও আমরা দেখছি যা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। বিশ্বের সবখানেই একটি বিষয় দেখা যায়—শকুন একটি পাখি মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারপাশে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। এই পাখিগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অপেক্ষা করে, যখন সুযোগ আসে তখনই মৃত প্রাণীর মাংস খায়। আমি ১৯৭১-এ বর্তমানের মতো বর্বরতা দেখেছি। এই সমস্যার শেষ কোথায়? ৫৩ বছর ধরে শুধু সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান করবে, এটাই সবার কাম্য। তবে সমস্যার সমাধান সহজ হবে না। শিক্ষার্থীদের গত কয়েক দিনের কাজকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মনে হচ্ছে সময় এসেছে পুরনো নীতিমালা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালা তৈরি করার এবং দেশের সকল স্তরের নাগরিকদের শিখিয়ে দেওয়ার। তারপর জনগণ এবং তাদের প্রতিনিধিদের কাছে গণতান্ত্রিক নীতিমালা বুঝিয়ে দিন।

আপনি কি জনগণের সেবা করতে নাকি সেবা পেতে রাজনীতি করতে চান? এর সত্য উত্তর যদি জানা না থাকে, তবে আমার এই লিখাটি পড়ুন—জেনে যাবেন।

নীতিমালা কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সম্পত্তি নয়, এটি জাতীয় পবিত্র সম্পদ। আর যেন শুনতে না হয় ‘আমার বাবা দেশটি স্বাধীন করে গেছে’। বরং শুনতে চাই যে, আবু সাঈদের মতো লাখো লাখো শহিদের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কোটা নিয়ে যেন কেউ নতুন করে রাজনীতি করতে না পারে বা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি না করতে পারে, তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই নির্বাচন হবে, রাষ্ট্র ক্ষমতাও হস্তান্তর হবে, তবে এমন ব্যক্তির হাতে হস্তান্তর করতে হবে যার নিজস্ব পরিচয় এবং যোগ্যতা রয়েছে। এখন থেকে এ ধরনের ভণ্ডামি বন্ধ করুন—যে ব্যক্তি নিজের পরিচয় ছাড়া অন্যের পরিচয়ে নিজের ক্ষমতা কায়েম করতে চায়।

দেশের সব জানালা খুলে দিন, সত্যিকার দেশপ্রেমিকদের মুখ দেখতে পাবেন। তা না হলে আমাদের দেশে কী হবে জানেন? আসুন, কিছুক্ষণ বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের সময়ের উপর ভ্রমণ করি।

দেশটি ১৮ কোটি মানুষের, তাই বলে পরিবারতন্ত্র নয়, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। দেশের উন্নয়নে যে লোক কাজ করবে তাকেই ক্ষমতায় আসতে দিন, যদি সেই লোক একজন অতি সাধারণ কৃষক, রিকশাচালক বা জেলে হন। তার রাজনীতি, নতুন গণতন্ত্রের ওপর জ্ঞান, দুর্নীতিমুক্ত থাকার সক্ষমতা, এবং জনগণের কল্যাণের প্রতি দক্ষতা বিবেচনা করুন।

৫৩ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার বা সরকার প্রধান দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারেনি। তাই শুধু কোটা পরিচয়ে এবং নিজের স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করে সুন্দর একটি দেশ গড়ার মনমানসিকতা এবং যোগ্যতা নিয়ে জনগণের সামনে আসুন।

আবু সাঈদের মত লাখো লাখো শহিদ ভাইবোন নিজেদের জন্য তাজা রক্ত দেয়নি। আজকে যে স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি, তার উদ্দেশ্য দুর্নীতিমুক্ত, কোটা মুক্ত একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ ফিরিয়ে আনা। আজকের বাংলাদেশ একবার নয়, কয়েকবার স্বাধীন হয়েছে। ক্ষমতার রদবদল হয়েছে। দেশ ভ্রমণে যে তালিকা খুঁজে পেলাম তা হলো:
– তাজউদ্দিন আহম্মদ (৭১-এর যুদ্ধকালীন সময়ের রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন)
– শেখ মুজিবুর রহমান
– খন্দকার মোশতাক আহমাদ
– আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
– জিয়াউর রহমান
– আব্দুস সাত্তার ও আবুল ফজল মোহাম্মদ আহ্সান উদ্দীন চৌধুরী
– হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
– সাহাবুদ্দিন আহমদ
– খালেদা জিয়া
– শেখ হাসিনা
– আবার খালেদা জিয়া
– সর্বশেষ টানা ১৬ বছর শেখ হাসিনা

এ তালিকার মতো কোটি কোটি তালিকা পাওয়া যাবে যদি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে ফিরে যান। একইভাবে প্রশাসনের তালিকা গঠন করা হয়েছে যার প্রমাণ শেখ হাসিনার প্রশাসন। ইতিহাস সাক্ষী, উপমহাদেশের ছোট্ট এই দেশের ক্ষমতার রদবদলে হিংসা ও লোভে ভরপুর। বাংলাদেশের রাজনীতি ব্যবসার একটি কেন্দ্রবিন্দু। এত কিছুর পরও কি আমাদের একই ভুল নতুন করে করা উচিত?

নতুন প্রজন্ম দেশের পরিকাঠামো এবং অবকাঠামো পরিষ্কার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং মেরামত করছে ক্লাস বন্ধ রেখে। কেন জানেন? আমাদেরকে হাতে-কলমে অনুশীলনের মাধ্যমে শিখাচ্ছে কীভাবে কী করতে হবে এবং আগামী কালের নতুন গণতন্ত্র কেমন হবে। স্যুট-কোট খুলে, পাজোড় গাড়ি থেকে নেমে, দরকারে সরকারকে রাস্তায় নেমে ময়লা পরিস্কার করতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন পারে, আপনি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে কেন পারবেন না?

মনে কি পড়ে, জর্জ ওয়াশিংটন কাঠ কাটতে পেরেছিলেন কিন্তু সেনাপ্রধান তা পারেননি। এর ফয়সালা তো সেদিনই হয়ে গেছে। তারপরও কেন সেই পুরনো কাহিনী নতুন করে দেখাতে হবে? আমি কি সত্যিকার্থে পুরো বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি!

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
শেয়ার