অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও কারফিউয়ের কারণে বাজারে চাল সরবরাহ কিছুটা বিঘ্নিত হলেও এখন তা স্বাভাবিক। চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আগামী সোমবার (২৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে ওএমএস কার্যক্রম (খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি) ফের চালু হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এ কয়দিন ওএমএস বন্ধ ছিল। আগামী সোমবার থেকে যথারীতি ওএমএস কার্যক্রম শুরু হবে।
সারাদেশে ৯৮৬টি ওএমএসের ডিলার রয়েছে। ঢাকায় মোট ডিলার ১৯১টি। এরমধ্যে ওএমএসের দোকান ১২১টি ও ৭০টি ট্রাক। ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও দুই প্যাকেট (প্রতিটিতে ২ কেজি করে) আটা কিনতে পারেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৪ টাকা।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। ফ্যামিলি কার্ডে ৫ কেজি করে ওএমএসের চাল বিতরণের জন্য বুধবার ৫০ হাজার টন চাল টিসিবিকে দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কারফিউয়ের কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, চালের দাম একটু বাড়তে পারে। গত সাত দিন বাংলাদেশে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে বিএনপি, জামায়াত ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা জ্বালাও-পোড়াও এবং দেশকে অস্থিতিশীল করেছে। দেশের উন্নয়ন ও উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলো আক্রমণ করেছে। অস্থির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কারফিউ জারি হয়েছে, এতে বিভিন্ন অটোরাইস মিলের উৎপাদন বন্ধ ছিল। গাড়ি চলতো না। বাজার বিপণন ব্যবস্থায় এর প্রভাবে পড়ে। এতে বাজার একটু বেড়েছে।
তিনি বলেন, গত রাত থেকে আবার সরবরাহ শুরু হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে চাল ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ঢুকছে। আশা করি, বাজারে খুব শিগগির আগের রূপ ফিরে আসবে। এ মুহূর্তে আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত আছে। খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই, ঘাটতি হবেও না। সহনশীল অবস্থা আগে যেমন ছিল তেমনই থাকবে।
বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৬ লাখ ৮১ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে জানিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এরমধ্যে চাল ১১ লাখ ৮০ হাজার টন, গম ৪ লাখ ৪৭ হাজার টন ও ধান দেড় লাখ টন। এই মুহূর্তে এত মজুত থাকা অবস্থায় চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই।
সহিংসতার কারণে বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বোরোতে এখন পর্যন্ত ৮ লাখ টন ধান-চাল কেনা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ চলবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সব মিল মালিক, খাদ্য কর্মকর্তা ও বাজার বিপণন ব্যবস্থায় যারা আছেন তাদের নিয়ে আমরা একটা সম্মেলন করব। যেখানে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইনের বিষয়ে তাদের অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে বাজার সহনীয় রাখতে শিগগির বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানটি হবে। এটি আগামী ২৮ জুলাই হওয়ার কথা ছিল, আপাতত এটি হবে না।
সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, যে গোষ্ঠী বাংলাদেশের এ ক্ষতি করেছে, এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায় তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। জনগণের কাছে আহ্বান সবাই মিলে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। এদের ঘৃণা করা দরকার। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটাই ব্যক্ত করেছেন।