ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের আস্থা রয়েছে বলে জানিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখছেন। ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এতো বিস্তৃত। চলমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম অনেক নিরাপদ ছিল। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত দুস্থ শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চট্টগ্রামের বড় বড় সব স্থাপনা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রামে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আশ্বস্ত হয়েছি আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইন এখনো আনটাচ আছে, একদম নিরাপদ আছে। এটা আমাদের জন্য খুবই স্বস্তির। কিন্তু সারাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তার কারণে আমরা অভ্যন্তরীণক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে অপশক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা হয়েছিল, ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। অর্থনীতি গতিশীল থাকবে। আমাদের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্য থেকে কেউ টেনে ধরতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, কাস্টমস পুরোপুরি ডিজিটালি কাজ করে। আমাদের সেন্ট্রাল ডিজিটাল সার্ভার স্টেশন, ডাটা সেন্টার পুড়ে দেওয়ার কারণে আমাদের কিন্তু ডিজিটাল প্লাটফর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । যে কারণে কাস্টমস তাদের কার্যক্রম করতে পারেনি।
খালিদ মাহমুদ বলেন, দেশের অচলাবস্থায়ও চট্টগ্রাম বন্দর থেমে থাকেনি। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং ঠিকভাবে হওয়ায় এখানে একটা কনটেইনারের ওপরে চারটা-পাঁচটা করে কনটেইনার বসানো হয়েছে। এ দুর্যোগের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর সাত আট হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে। কিন্তু সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনি। কারণ আমাদের কাস্টমস পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। পরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের পর ম্যানুয়ালি কিছু কার্যক্রম শুরু করে। নিয়মিত আমদানি পণ্য খালাস ও রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারার কারণে সার্বিক অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা স্লো হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট একটা ধাক্কা। জানি না এ ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামগ্রিক ক্ষতি মোকাবিলা ও জনজীবন স্বাভাবিক করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলছে। আপনারা জানেন রেল বন্ধ হয়ে গেছে, নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্রিজ কালভার্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ হওয়ার কারণে কমলাপুর আইসিডি অনেক সংকুচিত হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট আমাদের আইসিডির ওপর দিয়ে গেছে। পানগাঁওতে কিছুটা স্থবির অবস্থা তৈরি হয়েছিল। করোনার সময় কনটেইনার জট হয়েছিল। অফডক, কাস্টমস, এনবিআর সাপোর্ট দিয়েছিল। সম্মিলিতভাবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। খুব দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দরের ডেমারেজ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে অনেক কনটেইনার আমদানিকারকরা খালাস করতে পারেনি। তারা ডেমারেজ চার্জের মুখে পড়েছে। আপনারা জানেন যে, করোনার সময় চট্টগ্রাম বন্দর ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ওয়েভার দিয়েছিল। বর্তমান ডেমারেজের বিষয়টি ব্যবসায়ীরা যদি সেভাবে উপস্থাপন করে চট্টগ্রাম বন্দর সেটা নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করবে। কারণ আমরা তো শুধুই যে ব্যবসা করার জন্য নয়, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার জন্য এ বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ বন্দর পরিচালনা হবে না। অর্থনীতির সেবার ক্ষেত্রে এ বন্দর কাজে লাগবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সঠিক তথ্য প্রমাণসহ আসলে আমরা পাশে দাঁড়াবো।