কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ব্যাংকে লেনদেন হয়নি। এটিএম বুথেও ছিল টাকার স্বল্পতা। কয়েকটি ব্যাংকের সার্ভারও ডাউন ছিল। লেনদেন সমস্যা তৈরি হয় মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি এমএফএস সেবার ক্ষেত্রেও। এসব কারণে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। গতকাল বুধবার সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে প্রথম দিনেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা নিয়েছে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪ ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধার দেওয়া হয় ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।
এছাড়া ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপো আওতায় তিন ব্যাংকে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং এক দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। আর ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংকে দেওয়া হয় ৪৯৭ কোটি টাকা এবং ২৮ দিন মেয়াদে ৫ ইসলামি ধারার ব্যাংকে দেওয়া হয় ৯৮৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে একদিনেই ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার দেওয়া হয় ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাত দিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৪ দিন মেয়াদে সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদি টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার নির্ধারণ ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য ২৮ দিন মেয়াদির মুনাফার হার ছিল ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলমান পরিস্থিতির কারণে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এটিএমগুলোতেও নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। এসব কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক দিনে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা হিসাবে ঘাটতি ও নগদ জমায় (সিআরআর) ঘাটতি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক ব্যাংক। অনেক ব্যাংক আবার নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের চাহিদাও মিটিয়ে থাকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবারের ব্যাংকিং কার্যক্রমের পর পাঁচ দিনের ছুটি শেষে গতকাল বুধবার ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলেছে। এর মধ্যে শুক্র-শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এরপর গত রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন কার্যদিবস সাধারণ ছুটি ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা-বিক্ষোভের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।