গত পাঁচ বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫-১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৪১ জন। ১৮-২৫ বছর বয়সী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন।
শনিবার (১৩ জুলাই) ধানমন্ডিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ২০১১ সালের ১১ জুলাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। ট্রাকটিতে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ৪২ শিক্ষার্থী। ওই দুর্ঘটনায় তাদের সঙ্গে নিহত হন আরও ৩ জন। দিনটিকে স্মরণ করে গতকাল ‘সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত: পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সাড়ে ৫ বছরে ১ হাজার ৫৩৪ শিক্ষার্থী পথচারী হিসেবে যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় নিহত হয়েছেন। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৭২১ শিক্ষার্থী। একইসময়ে মোটরসাইকেলচালক বা আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৩ জন। ১৩-২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা মূলত বাইকচালক ও আরোহী হিসেবে প্রাণ হারিয়েছেন।
গত সাড়ে পাঁচ বছরের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে আঞ্চলিক ও মহাসড়কে। এ সময় গ্রামীণ সড়কে ১ হাজার ৩৩৯ জন, শহরের সড়কে ১ হাজার ৪৮৬, আঞ্চলিক সড়কে ১ হাজার ৬৫১ ও মহাসড়কে ১ হাজার ১৪৩ শিক্ষার্থী নিহত হন।
নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ থ্রি-হুইলার দুর্ঘটনায়, ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ পণ্যবাহী মোটরযানের চাপায়, ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাসচাপায়, ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাইসাইকেল ও প্যাডেল রিকশা এবং ৩৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন উল্লেখ করেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা এবং ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতাকে।
সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু কমাতে সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বছরে একবার ক্যাম্পেইন আয়োজন করা, সরকারি উদ্যোগে শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্লাস পরীক্ষায় সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশ্ন থাকা, গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, অনিরাপদ যানবাহন বন্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা অন্যতম।
কাফি