২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর ও শুল্কহার বাড়ায় কোমল পানীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে এ ভোগ্যপণ্যটির চাহিদাও কিছুটা কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্বে। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণ ২০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত করেছে কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) একটি চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কর ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ২ জুলাই একটি চিঠি দিয়েছে বিডা।
বিডার নিবন্ধন ও সহায়তা বৈদেশিক শিল্প শাখার পরিচালক মু. জসীম উদ্দিন খানের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি এনবিআর চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি জু-উন নাহার চৌধুরী বরাবর অনুলিপি পাঠানো হয়।
বিডার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে কোমল পানীয় খাতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ১৪৪ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩৩ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে এ খাতে গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় সরকার রাজস্ব কম পেয়েছে প্রায় ২০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
এর কারণ হিসেবে চিঠি উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিক্রয়ের ওপর বিদ্যমান করের সঙ্গে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩ শতাংশ ন্যূনতম করহার প্রবর্তন করায় কোমল পানীয় খাতে মোট স্থানীয় কর আরটিই বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও কমে যায়।
চিঠিতে বলা হয়, এ খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ন্যূনতম শুল্ক ৩ থেকে ১ শতাংশে না কমিয়ে বরং সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে এ শিল্পের মোট করের হার প্রায় ৫৩ শতাংশে পৌঁছাবে, যা অন্যান্য শিল্পের তুলনায় সর্বোচ্চ। প্রস্তাবিত বাজেটে বর্ধিত করহার এবং শুল্ক বিবেচনায় নিয়ে কোকা-কোলা আইসেক (সিসিআই) তাদের বিনিয়োগ স্থগিত এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কোমল পানীয় খাতে বিনিয়োগ সংরক্ষণে আগামী তিন বছরের জন্য প্রত্যাশিত নতুন কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোকা-কোলার পক্ষ থেকে ন্যূনতম শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়ে বিডাকে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির তথ্য এনবিআরকে জানিয়েছে বিডা। কোকা-কোলা বিনিয়োগ স্থগিত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড (সিসিবিবি) ২০২৪ সালে তুর্কি কোম্পানি কোকা-কোলা আইসেসেক (সিসিআই) ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে অধিগ্রহণ করে।