আবেগকে পুঁজি করে যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোটা যুক্ত বিসিএসের তুলনায় কোটামুক্ত বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে ৩.৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। একটি বিসিএসে কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র ৪ জন নারী সুযোগ পেয়েছে। ফরেন ক্যাডারে সুযোগ পেয়েছে ২ জন নারী। কোটামুক্ত একটি বিসিএসে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী চাকরি পায়নি। ৫০ জেলার নারীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কোটাপদ্ধতি থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৬ ভাগের বেশি নারীরা চাকরি পেয়েছে। কোটা তুলে দেওয়ার পর ১৯ ভাগে নেমে এসেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়ে যে সব তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত নয় উল্লেখ করে কাদের বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিদ্যমান পদ্ধতি মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা শতকরা ৪৪ ভাগ কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় ৬৬.২ ভাগ মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই নিয়মে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনো কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পাননি। তাই বৈচিত্র্যময়, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে কোটার গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্র সর্বজনীন পবিত্র সংবিধানের অধীনেই পরিচালিত হয়।
রাষ্ট্রকে সবার অধিকার সংরক্ষণ করতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোটা মানেই বৈষম্য নয় বরং বৈষম্য নিরসনে কোটা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সম্পূর্ণ রায় আসার পরে সরকার সব জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে তারুণ্যের শক্তির ওপর নির্ভর করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দিন বদলের সনদের নামে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা তারুণ্যের ধারক ও বাহক। সে তারুণ্য যেন কারো ক্ষুদ্র স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে কাজ করবে বলে আশা করি। আবার এই তারুণ্যকে কেউ যাতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সব প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশক্রমে অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তারুণ্যের শক্তি ও আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু আবেগকে পুঁজি করে যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক করিনি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই, এমনটি নয়। শিক্ষকদের ব্যাপারটা কোটা থেকে আলাদা বিষয়। আমরা সতর্কভাবে বিষয়টি দেখছি, আমার বিশ্বাস অচিরেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
কোটা আন্দোলনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার বলেছি, এই আন্দোলনকে কেউ যদি রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলতে চায়, সেটাকে আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবো।
কাফি