ক্যাটাগরি: চিত্র-বিচিত্র

যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে এই কিয়ার স্টারমার?

যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বুথ ফেরত জরিপে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। খবর বিবিসির। ভোটে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবির তথ্য সামনে আসছে। আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টি।

ভোটের চূড়ান্ত ফল একই হলে যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরবে কনজারভেটিভ পার্টি। বিদায় নেবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এদিকে ভোটের মাঠে লেবার পার্টির এমন সাড়া জাগানো সাফল্যের নায়ক স্যার কিয়ার স্টারমার। ধারণা করা হচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লেবার পার্টি সরকার গড়লে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি।

স্টারমারের জন্ম রাজধানী লন্ডনে। ৬১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একজন মানবাধিকার আইনজীবী। তিনি পাবলিক প্রসিকিউশনের ডিরেক্টর এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার অর্থ স্টারমার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সবচেয়ে সিনিয়র প্রসিকিউটর সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

আইনজীবী হিসেবে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের পর স্টারমার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সাংসদ হন পঞ্চাশের কোঠায় এসে। তবে রাজনীতি নিয়ে তার বরাবরই আগ্রহ ছিল। যুবা অবস্থায় তিনি ছিলেন উগ্র বামপন্থী।

পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে স্টারমার বেড়ে ওঠেন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের সারে-তে। তাকে শ্রমজীবী শ্রেণির সঙ্গে জীবনের যোগের কথা প্রায়শই বলতে শোনা যায়। তার বাবা একটা কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে কাজ করতেন এবং মা ছিলেন নার্স।

স্টারমারের পরিবারও কট্টর লেবার পার্টির সমর্থক ছিল। যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তার নামে। স্কটিশ খনি শ্রমিক কিয়ের হার্ডির নাম অনুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। তিনি লেবার পার্টির প্রথম নেতা ছিলেন।

বড় হয়ে ওঠার সময় স্টারমারের পারিবারিক জীবন খুব সুখকর ছিল না। দূরত্ব রেখে চলতেন তার বাবা। মা জীবনের দীর্ঘকাল ‘স্টিল’স ডিজিজ’ নামক এক ধরনের অটো-ইমিউন ডিজিজে ভুগেছেন। রোগের কারণে ধীরে ধীরে হাঁটার এবং কথা বলার ক্ষমতা হারান তার মা। একসময় তার পা কেটে বাদ দিতে হয়েছিল।

১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির স্থানীয় যুব শাখায় যোগ দেন স্টারমার। কিছু সময়ের জন্য তিনি উগ্র বামপন্থী একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছিলেন।

স্টারমার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি শিক্ষা লাভ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। লিডস ও অক্সফোর্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ব্যারিস্টার হিসাবে মানবাধিকার নিয়ে কাজও করেছেন। সেই সময় ক্যারিবিয়ান ও আফ্রিকার দেশগুলিতে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্তির জন্য তিনি কাজ করেন।

স্টারমার প্রথমবার সংসদে যান ২০১৫ সালে। লন্ডনের হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের সাংসদ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কট্টর বাম রাজনীতিবিদ জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি তখন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকলাপ নজরে রাখার জন্য স্টারমারকে ‘শ্যাডো হোম সেক্রেটারি’ (ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার পরে স্টারমারকে ‘শ্যাডো ব্রেক্সিট মন্ত্রী’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর লেবার পার্টির নেতা হওয়ার সুযোগ পান তিনি।

১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হেরেছিল লেবার পার্টি। যা জেরেমি করবিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। সমর্থকদের চোখে স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। যদিও বহু সমালোচকদের মতে, তিনি খুব একটা চৌকস নন। বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক।

এদিকে গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকে সমর্থন করেছিলেন স্টারমার। তার এই সিদ্ধান্ত অনেক ফিলিস্তিনপন্থী ভোটারদের ক্ষুব্ধ করেছিল। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো লেবার পার্টির বহু সাংসদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।

তবে গাজা ইস্যুতে সম্প্রতি স্টারমারকে সুর বদলাতে দেখা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ডাক দিয়েছিলেন “এমন যুদ্ধবিরতির যা স্থায়ী হবে”। জোর দিয়ে বলেছিলেন, “এখন এটাই হওয়া উচিত!”

গত মার্চে ‘ইউগভ’-এর এক জনমত জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করেন ইসরায়েল-গাজার বিষয়টা সঠিকভাবে পরিচালনা করছেন না স্টারমার।

এদিকে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্য সান আয়োজিত এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে কনজারভেটিভ সরকারের রুয়ান্ডা অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে স্টারমার বলেন, “বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যেসব মানুষ আসছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।”

স্টারমারের এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সম্প্রদায়। এক্ষেত্রে প্রতিবাদও জানানো হয়।

তুমুল সমালোচনার জেরে সুর নরম করেন স্টারমার বলেন, “আমি আসলে বাংলাদেশকে আলাদাভাবে বোঝাতে চাইনি। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানকে আমি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করি।”

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার