ক্যাটাগরি: জাতীয়

চীনের জিডিআইয়ে তালিকাভুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ!

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চাওয়াতে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করতে চায় বেইজিং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কার্যক্রমটি পিছিয়ে যেতে পারে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সরকারপ্রধানের বেইজিং সফরে বেশ কিছু সমঝাতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে উভয়পক্ষ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-জিডিআই, রাজনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য সহায়তা, টাকা-ইউয়ানে লেনদেন, ব্লু-ইকোনোমি, বিনিয়োগ সুরক্ষা, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, একাধিক মৈত্রী সেতু নির্মাণ ও সংস্কার, মানুষে মানুষে যোগাযোগ এবং চীনের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভির মধ্যে সহেযাগিতা।

এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি স্টেশনের বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরে জিডিআই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই না হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এটা প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল হুমকি হিসেবে দেখছে বেইজিং। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলোকে অংশীদার বানাতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত—এ চার দেশের জোট কোয়াড। চীনবিরোধী বলে পরিচিত কোয়াড জোটে বাংলাদেশকে অনেক আগ থেকে টানার চেষ্টা করছে সদস্য দেশগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-তো ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশকে অংশীদার মনে করে। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব জিডিআইয়ে বাংলাদেশকে যুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বেইজিং।

২০২২ সালের আগস্টে ঢাকা সফর করেছিলেন চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই (তিনি বর্তমানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। সেই সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই)-এর মতো উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক।

লি’র উত্তরসূরি চীনের বর্তমান রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত মার্চের মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে দাবি করেন, জিডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

গত বছরে মে মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ-চীনের পররাষ্ট্র-সচিব পর্যায়ের সভায় দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সচিব) সুন ওয়েডং জিডিআই প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বেইজিং বিভিন্ন সময়ে জিডিআইয়ে ঢাকাকে যুক্ত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনায় চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করেছে দেশটি।

সর্বশেষ, চলতি বছরের জুনের শুরুর দিকে বেইজিংয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র-সচিব পর্যায়ের সভায় জিডিআই করার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে দেশটি।

তবে বাংলাদেশের বিশ্লেষকেরা বলছেন, জিডিআই নিয়ে বাংলাদেশ একটু ধীরে চলো নীতিতে চলছে। হয়ত চট করে যেতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিকে এখনও যুক্ত হয়নি। কিন্তু চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যুক্ত আছে, এটা তো জিডিআইয়ের বাইরে না। জিডিআইয়ে হয়ত বাংলাদেশ এমনি যুক্ত থাকবে, কিন্তু কোনো চুক্তি বা এমওইউ করবে না। তবে এটা নিয়ে যে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ-আলোচনা হবে না, সেটা বলা ঠিক হবে না। আলাপ-আলোচনা হবে। জিডিআইয়ে বাংলাদেশের যেতে বাধা দেখছি না। হয়ত চীনের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভে (জিএসআই) বাংলাদেশ যাবে না।

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার