ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

সম্পদে বিল গেটসকে ছাড়িয়ে গেলেন সাবেক সহকারী বলমার

সোমবার (১ জুলাই) মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে টপকে বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী ব্যক্তির জায়গা দখল করে নিয়েছেন তার সাবেক সহকারী স্টিভ বলমার। তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে আছেন।

মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌছার পর বলমারের এই উন্নতি হলো। এ বছর কোম্পানিটির মোট মুনাফা ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বদৌলতে চাঙা হয়ে উঠেছে মার্কিন শেয়ারবাজার। আর এর অন্যতম সুবিধাভোগী হয়েছে ওপেনএআইয়ের সঙ্গে জোট বাঁধা মাইক্রোসফট।

বলমারের নিট সম্পত্তির পরিমাণ এখন ১৫৭.২ বিলিয়ন ডলার। এর ৯০ শতাংশই মাইক্রোসফটের শেয়ারে রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স।

অন্যদিকে বিল গেটসের নিট সম্পত্তির পরিমাণ এখন ১৫৬.৭ বিলিয়ন ডলার। এসব সম্পত্তি বিভিন্ন খাতে রয়েছে। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতার অর্ধেক সম্পদ রাখা আছে ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে। মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি ও লভ্যাংশ থেকে পাওয়া আয় দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রিপাবলিক সার্ভিসেস ইনক-এ গেটসের ২১ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার আছে ক্যাসকেডের মাধ্যমে।

৬৮ বছর বয়সি গেটস জনহিতকর কাজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার সম্পদ কমাচ্ছেন। প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ও বন্ধু ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে মিলে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত অর্থদানের মাধ্যমে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের গেটস ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি।

দুই দশক আগে দাতব্য সংস্থাটি চালুর পর থেকে গেটস ও তার প্রাক্তন স্ত্রী ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। মেলিন্ডা সম্প্রতি সংস্থাটির কো-চেয়ারের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত দাতব্য কাজের ব্যবহারের জন্য তিনি ১২.৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছেন।

বিশ্বের শীর্ষ ধনীদেরকে তাদের সম্পত্তির সিংহভাগ দান করে দিতে অনুপ্রাণিত করতে ২০১০ সালে বিল গেটস, মেলিন্ডা ও বাফেট গিভিং প্লেজ নামে একটা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

৬৮ বছর বয়সি স্টিভ বলমার গিভিং প্লেজে নাম লেখাননি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জনহিতকর কাজ করলেও পরিমাণের দিক দিয়ে বিল গেটসের ধারেকাছেও নেই।

বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মিলে ১৮৭৫ সালে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এর নেতৃত্ব দেন। এরপর তার জায়গায় সিইও হিসেবে আসেন বলমার।

বলমার ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্টের সহকারী (পিএ) হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দেন। যদিও পিএর চেয়ে বরং বিজনেস ম্যানেজার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতেন বেশি।

বলমার প্রথমে ৫০ হাজার ডলার মূল বেতনে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে তার মাধ্যমে হওয়া মুনাফা প্রবৃদ্ধির ১০ শতাংশ নেওয়ার কথা পাকা হয়েছিল। কিন্তু বলমারের মুনাফা অনেক বেশি হয়ে যাবার পর তিনি এর বদলে বড় পরিমাণে ইকুইটি স্টক নিতে রাজি হন।

বিল গেটসের এই বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ২০০০ সালে পদোন্নতি পেয়ে মাইক্রোসফটের সিইও হন। ২০১৪ সালে ৩৩৩ মিলিয়ন শেয়ার বা ৪ শতাংশ স্টেক নিয়ে তিনি সেই পদ থেকে অবসরে যান। ওই বছরই তিনি মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় শেয়ারধারী হন।

২০১৪ সালে তিনি ২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল লিগ এনবিএর দল লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সকে কিনে নেন। বর্তমানে এই বিনিয়োগের বাজারমূল্য ৪.৬ বিলিয়ন বলে ধারণা করা হয়।

সম্পত্তিতে গেটসকে ছাড়িয়ে গিয়ে একজন কর্মীর সম্পত্তির দিক থেকে ওই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার বিরল নজির স্থাপন করলেন বলমার।

উল্লেখ্য, ব্লুমবার্গের ধনী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষ ১০-এ বলমার এক ব্যতিক্রমী নাম। কারণ, এ তালিকার ইলন মাস্ক, বার্নার্ড আর্নল্ট, জেফ বেজোসসহ বাকিরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত অথবা আগে থেকেই চালু কোম্পানির শেয়ারের সুবাদে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে বলমার মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বা বর্তমান সিইও কোনোটাই নন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার