বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট, ঋণ আদায় কম, তারল্য সংকট, মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি এবং সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। এরপরও দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।
ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন চার্জ কমিশন ও ট্রেজারির আয়ের ওপর ভর করে এবার ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে, পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়; পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সাড়ে ৩৭ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে হয়। এরপরই চূড়ান্ত হয় নিট বা প্রকৃত মুনাফা।
দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রান্তিক (তিন মাস) ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দিতে হয়। এর আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। তারপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
সোমবার (১ জুলাই) ছিল ব্যাংক হলিডে। এ দিন ব্যাংকগুলো তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্রিত করে বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জে জমার দেওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালন মুনাফার তথ্য জানাতে পারবে না। তবে, খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে অধিকাংশ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসকারি খাতের ৪টি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ, ডলার ও তারল্য সংকটসহ নানামুখী সংকটের মধ্যেই এসব ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে সেগুলো হচ্ছে- রূপালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিলো ৩২০ কোটি। অর্থাৎ চলতি বছরের আলোচ্য সময়ে রূপালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩০ কোটি টকা।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৭৯ কোটি। গত বছরের একই সময়ে ৪০৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। এক বছরে ব্যাংটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৭২ কোটি টাকা।
অপরদিকে আলোচ্য এ সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক ২৫০ কোটি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১১ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।
তবে পরিচালন মুনাফাই একটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে পরিচালন মুনাফা। আর পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ,সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক।
এসএম