বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের গবেষকেরা

বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের গবেষকেরা
গবেষকদের এক বৈশ্বিক ডাটাবেজ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে সারা বিশ্বের দেড় লাখেরও বেশি গবেষক বিষয়ভিত্তিক এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বিশ্বসেরা গবেষকদের এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন দেশের ২৬ জন শিক্ষক ও গবেষক। অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের প্রায় দেড় হাজার গবেষক এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএলওএস বায়োলজি জার্নালে সম্প্রতি এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিপার্টমেন্ট অব বায়োমেডিকেল ডাটা সায়েন্সের গবেষক জন আইওয়ান্নিডিস, নিউমেক্সিকোভিত্তিক সাইটেক স্ট্র্যাটেজিসের বিশেষজ্ঞ কেভিন ডব্লিউ বয়াক ও নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক এলসেভিয়ারবিভির রিসার্চ ইন্টেলিজেন্সের গবেষক জেরোয়েন বাস বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩ জন বিজ্ঞানীর এ বিষয়ভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেন। প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে তাদের নিজস্ব গবেষণাকাজের সংখ্যা ও সাইটেশনের ভিত্তিতে এ তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে তালিকায় স্থান করে নেয়া ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এএ মামুন। তার গবেষণার বিষয় ‘ফ্লুডস অ্যান্ড প্লাজমা’য় সারা বিশ্বে তার অবস্থান ১৩০তম। বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৪১৬টি প্রকাশনা রয়েছে। সাইটেশন সংখ্যা ১৪ হাজার ২৫০। পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ড. মামুন ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সালে পদার্থবিদ্যায় অসামান্য অবদানের জন্য জার্মানির আলেকজান্ডার ভন হোমবোল্ট ফাউন্ডেশন থেকে ফ্রেডরিক উইলিয়াম ‘ব্যাসেল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। ড. মামুন যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি জার্মানির হোমবোল্ট পোস্টডক ফেলো হিসেবেও কাজ করছেন।

র্যাংকিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারা গবেষকদের ওপর যে ডাটাবেজ তৈরি করেছে, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। গবেষণার সংখ্যা, সাইটেশন, গবেষণার প্রভাব, কী ধরনের জার্নালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে—এ ধরনের নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে এ ডাটাবেজ করা হয়েছে। এ ধরনের বৈশ্বিক তালিকায় নাম আসা অবশ্যই একজন গবেষকের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।

বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের ওই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. ফিরদৌসী কাদরী। বিষয়ভিত্তিক বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে তার অবস্থান ১ হাজার ৮৮০তম। উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অবদান রাখায় এ বছর আন্তর্জাতিক সম্মাননা ল’রিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ডে (এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল) ভূষিত হয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে তিনি আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির ‘মজিলো ক্যাচিয়ার পুরস্কার’ লাভ করেন। এরপর ২০১২ সালে ভূষিত হন ইনস্তিতুত দ্য ফ্রাঁসের ‘ক্রিস্তোফ মেরো’ পুরস্কারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করার পর যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে ১৯৮৮ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজেস রিসার্চে (আইসিডিডিআরবি) যোগ দেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিবও এ তালিকায় রয়েছেন। ড. আন্দালিব যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পেনস্টেট বেহেরেন্ড কলেজের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কর্মজীবনে ড. আন্দালিব বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন। মূলত স্বাস্থ্যনীতি ও সেবা বিষয়ে গবেষণা করছেন তিনি। এ বিষয় সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বৈশ্বিক তালিকায় তিনি আছেন ২৯৮তম স্থানে।

স্ট্যানফোর্ডের ওই তালিকায় রয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিজ্ঞানী সালিমুল হকও। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইইডি) সিনিয়র ফেলো এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক সালিমুল হক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স গবেষকদের তালিকায় আছেন ১ হাজার ৪৬১তম স্থানে।

আইসিডিডিআর,বির বেশ কয়েকজন গবেষকই এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এর মধ্যে রিউম্যাটোলজিস্ট বিষয়ে গবেষণা করেন মুহম্মদ ইউনুস। তার অবস্থান ১৯৪তম। একই প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ জন ডি ক্লেমেনসের গবেষণার বিষয় মাইক্রোবায়োলজি। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে তার অবস্থান ৬১১তম। র্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির মাইক্রোবায়োলজির আরেক গবেষক রশিদুল হকের অবস্থান ১ হাজার ১৭৮তম। অন্যদিকে আমিনুর রহমানের গবেষণার বিষয় জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষকদের বৈশ্বিক তালিকায় তার অবস্থান ১ হাজার ৯৮২তম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আনোয়ার হোসেন তার বিষয়ভিত্তিক গবেষণার বৈশ্বিক তালিকায় আছেন ৪৬৩তম স্থানে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম মিজানুর রহমান জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন বিষয়ক গবেষণায় বৈশ্বিক তালিকায় আছেন ৭৬৭তম স্থানে। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মুস্তাফিজুর রহমানের গবেষণার বিষয় জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ৪৩১তম স্থানে রয়েছেন তিনি।

নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিষয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস রহমান। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষকদের বৈশ্বিক তালিকায় তিনি আছেন ১ হাজার ১৫তম স্থানে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএম রহমানের গবেষণার বিষয় পলিমার্স। এ বিষয়ের বৈশ্বিক গবেষকদের তালিকায় তিনি রয়েছেন ১ হাজার ৪০তম স্থানে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা হাসানুজ্জামান প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি বিষয়ে গবেষণা করে বৈশ্বিক গবেষকদের তালিকায় ১ হাজার ৮৪৯তম স্থান অর্জন করেছেন। একইভাবে ইউশিকাগো রিসার্চ বাংলাদেশের মাহফুজুর রহমান টক্সিলজি বিষয়ক গবেষকদের তালিকায় আছেন ৮১৪তম স্থানে।

এইচকেজি এগ্রোর গবেষক আবেদ চৌধুরী প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি বিষয়ক গবেষকদের তালিকায় ২ হাজার ৩৩১তম স্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম রফিকুল ইসলাম এনার্জি বিষয়ক গবেষকদের তালিকায় আছেন ১ হাজার ৮০৩তম স্থানে। বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটির সৈয়দ মাসুদ আহমেদ ট্রপিক্যাল মেডিসিন গবেষকদের র্যাংকিংয়ে ৫১৮তম হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আব্দুল মজিদ এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার গবেষকদের তালিকায় হয়েছেন ১ হাজার ১৭৯তম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকে বালা ফুড সায়েন্স গবেষকদের তালিকায় ৯৫৩তম অবস্থান অর্জন করেছেন। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহনাফ রাশিক হাসান নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ক গবেষকদের তালিকায় আছেন ২ হাজার ৪১তম অবস্থানে। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ওমর রহমান জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন নিয়ে গবেষণা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈশ্বিক গবেষকদের তালিকায় ২ হাজার ১৫৪তম হয়েছেন।

পাল্প অ্যান্ড পেপার রিসার্চ ডিভিশনের এম সারওয়ার জাহান ফরেস্ট্রি বিষয়ক গবেষকদের তালিকায় আছেন ৩২৬তম স্থানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি গবেষকদের তালিকায় ১ হাজার ৯০৮তম হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রনজিত কুমার বিশ্বাস তার বিষয়ের বৈশ্বিক তালিকায় ২৮৪তম হয়েছেন। মূলত মাইনিং অ্যান্ড মেটালার্জি বিষয়ে গবেষণা করেন তিনি।

এছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ সালাম ট্রপিক মেডিসিন গবেষকদের তালিকায় ৪৪৯তম স্থানে আছেন। তবে তালিকার তার নামটি ভুলক্রমে যুক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন এ শিক্ষক। তিনি বলেন, হয়তোবা প্রযুক্তিগত ভুলের কারণে আমার নামটি যুক্ত হয়েছে। এটি তো অনেক বড় কাজ। তথ্য সংগ্রহের কাজে এ ধরনের ভুল হতে পারে।

অর্থসংবাদ/ এমএস

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়