ক্যাটাগরি: জাতীয়

ছাগলকাণ্ডে বেরিয়ে এলো মতিউরের সম্পদের পাহাড়!

বহুল আলোচিত ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’ থেকে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে ভাইরাল হওয়া ‍১৯ বছর বয়সী তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের বাবা মতিউর রহমানের সম্পদ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তিনি সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। এমনকি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামের রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও। বেনামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে জানা যায়, ঢাকাতেই অন্তত ২ ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে। বসুন্ধরার ডি ব্লকের ৭এ রোডের ৩৮৪ নম্বর ভবনের মালিক তিনি। সাত তলা ভবনের প্রথম দ্বিতীয় তলায় প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে নিয়ে সপরিবারে বাস করেন। গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে ৮৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর প্লটে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বেগ পার্ক ভিউতে রয়েছে ৪টি ফ্ল্যাট। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার থাকেন লালমাটিয়ার ৮নং রোডের ৪১/২ ইম্পেরিয়াল ভবনে। কাকরাইলেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ছোট স্ত্রীর নামে। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়ার পর তারা বর্তমানে কাকরাইলের ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। এছাড়া ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে একাধিক ফ্ল্যাটের হদিস পাওয়া গেছে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ডেভেলপার কোম্পানি শান্তা ডেভেলপারের করা বিভিন্ন ভবনে তার ৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ফ্ল্যাট প্রথম স্ত্রীর সন্তান ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে কেনা হয়েছে।

জানা গেছে, আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্যে নিজের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন মতিউর রহমান। টঙ্গীতে ৪০ হাজার বর্গফুটের এসকে ট্রিমস নামে ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সেসরিজ কারখানা আছে তার। যদিও কাগজে-কলমে কারখানার মালিক তার ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদার। ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩০০ বিঘা জমিতে ও বরিশালের গ্লোবাল সুজ নামে দুটি জুতা তৈরির কারখানা আছে। নরসিংদীর রায়পুরায় ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টের মালিকানায় আছে তার ছেলে ও মেয়ে। এছাড়াও পূর্বাচলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শ্যুটিং স্পটের মালিক তিনি। দেশের নামকরা ডেভেলপার কোম্পানিতে তার মালিকানা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে সোবহান অ্যাভিনিউর ৯-১০ নম্বর রোডের ৬৫৭ এ, ৬৫৭ বি এবং ৭১৬ নম্বর প্লটে বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।

গাজীপুর সদর এলাকায় ১৭১নং এসএ দাগে ১০.৫০ শতাংশ, ১৭২নং এসএ দাগে ৩.৯০ শতাংশ, ১৬৩নং এসএ দাগে ৭.৫০ শতাংশ, ১৬৩নং এসএ দাগে ৬ শতাংশ, ১৭০নং এসএ দাগে ৬ শতাংশ, ১৬৩নং এসএ দাগে ৭ শতাংশ, ১৭০নং দাগে ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। এছাড়া সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৩০৩৫, ১৭৬৩ ও ১৭৬২নং দাগে ১২.৫৮ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৩৬৯৬নং এসএ দাগে ১৪.০৩ শতাংশ, গাজীপুরে ৪৮.১৬ শতাংশ, ১৪.৫০ শতাংশ এবং ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও লায়লা কানিজের নামে .৪৫১৬২৫ একর জমি রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে পড়াশোনা করা মতিউর রহমান অনেক কোম্পানির ছায়া পরিচালক। একাধিক ছোট কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার মাধ্যমে বাজারসংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িতদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার বেসরকারি এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মতিউর রহমান বলেন, কমিশনার থাকাকালে কেউ এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে, তা আমি মাথা পেতে নেব। রাজস্ব আদায় পারফরম্যান্সে কখনো ফেল করিনি। অথচ দুর্ভাগ্য আমার, চাকরি জীবনের প্রতিটি প্রমোশনের আগে দুদক তদন্ত করেছে। এখন আবার সদস্য পদে পদোন্নতির আগে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে না, যিনি বলতে পারবেন মতিউর রহমান তার সঙ্গে দুর্নীতি করেছেন। এটা একশ পার্সেন্ট আস্থার সঙ্গে বলতে পারি।’

কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার