বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ সংবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সংবাদকে তারা বর্ণনা করছেন হতাশাজনক, নিরলস এবং বিরক্তিকর হিসেবে। আবার টেলিভিশন এবং ছাপা পত্রিকার (প্রিন্ট) দর্শক এবং পাঠক হ্রাস পেলেও, তরুণরা সংবাদের জন্য নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমের ওপর। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৪ জনই (৩৯ শতাংশ) বলেছেন, তারা মাঝেমধ্যে বা প্রায়ই সংবাদ এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ মানুষকে সংবাদ বিমুখ করায় ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৪৭টি দেশের ৯৪ হাজার ৯৪৩ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর জরিপ চালায় ইউগভ (ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট-ভিত্তিক বাজার গবেষণা এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান)। এমন সময়ে এ জরিপ করা হয়েছে যখন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে ভোটে যাচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে নির্বাচনের কারণে খবরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে সার্বিক প্রবণতা অনেকটাই নিম্নমুখী রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ৪৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা সংবাদের প্রতি অত্যন্ত বা অতিমাত্রায় আগ্রহী। যেখানে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালের পর থেকে সংবাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নিক নিউম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘গেল কয়েক বছরে সংবাদের বিষয়বস্তু স্পষ্টতই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি মহামারি দেখেছেন, যুদ্ধের মধ্যে আছেন। তাই মানুষের সংবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মোটামুটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তা সেটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই হোক কিংবা বাকি জীবন বয়ে বেড়ানোর সাধারণ চাওয়া- যাই হোক না কেন।’
নিউম্যান বলেন, যারা বেছে বেছে সংবাদ এড়িয়ে চলেন, তারা নিজেকে ‘ক্ষমতাহীন’ মনে করার কারণে এমনটি করে থাকেন। তারা মনে করেন, বিশ্বে ঘটে যাওয়া বড় সব ঘটনার ওপর তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
কিছু মানুষ চারপাশের নানা সংবাদে বিহ্বল এবং বিভ্রান্ত বোধ করেন। আবার অন্যরা রাজনীতির কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিবেদনে বলা হয়, চারপাশের বিপুল সংবাদ প্রবাহ দেখে মূলত নারী ও তরুণ বয়সীদের ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
জরিপে দেখা গেছে, সংবাদের প্রতি মানুষের আস্থা ৪০ শতাংশে স্থির থাকলেও করোনা মহামারির সময়ের তুলনায় তা এখনও সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ কম। প্রতিবেদন মতে, টিভি এবং ছাপা পত্রিকার (প্রিন্ট) মতো ঐতিহ্যবাহী সংবাদ উৎসগুলোর দর্শক এবং পাঠক গত দশকে তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। তরুণরা অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ পেতে পছন্দ করেন।
যুক্তরাজ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ (৭৩ শতাংশ) জানিয়েছেন, তারা অনলাইনে সংবাদ দেখেন, যেখানে টিভিতে ৫০ শতাংশ এবং ছাপা পত্রিকায় মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ সংবাদ দেখে থাকেন। ফেসবুক এখনও সংবাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হলেও, দীর্ঘদীন ধরেই এটি পতনের মুখে রয়েছে।
ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপ এখনও অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ উৎস হিসেবে আছে। তবে বাড়ছে টিকটকের ব্যবহার এবং প্রথমবারের মতো এক্স (সাবেক টুইটার)-কে ছাড়িয়ে গেছে টিকটক।
বলা হচ্ছে, ১৩ শতাংশ মানুষ খবরের জন্য ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। যেখানে ১০ শতাংশ মানুষ এক্স ব্যবহার করেন। বিশ্বব্যাপী ১৮-২৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে টিকটক ব্যবহারের এই সংখ্যা আরও বেশি, ২৩ শতাংশ। এই পরিবর্তনের সঙ্গে অনলাইন সংবাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠছে ভিডিও। স্বল্পদৈর্ঘ্য সংবাদ ভিডিওতে মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।
কাফি