পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের কারখানা বন্ধ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে একদল কুচক্রী মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে অসাধু এ চক্রটি ‘এশিয়াটিক ল্যাবের কারখানা বন্ধ’, ‘এশিয়াটিকের কারখানায় তালা’ ইত্যাদি শিরোনাম ব্যবহার করে কোম্পানি ও পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে এসব গুজব ছড়াচ্ছে তারা।
অর্থসংবাদের এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারখানা বন্ধের কোন পরিকল্পনাই করেনি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। বরং ঈদের ছুটি কাটিয়ে শনিবার কারখানার কার্যক্রম শুরু করবে ওষুধ খাতের এ কোম্পানিটি। সেখানে কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা কিংবা ছয় মাসের জন্য বন্ধ থাকবে- এমন তথ্য নিছক গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদ অর্থসংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের কারখানা বন্ধ হওয়ার তথ্য ভিত্তিহীন গুজব। কে বা কারা, কিসের স্বার্থে বিনিয়োগকারীদের মাঝে এমন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন- তারা ভালো জানবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কারখানায় এখন পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি চলছে। আগামীকাল শুক্রবার এ ছুটি শেষ হবে। শনিবার থেকে আমাদের কারখানায় যথারীতি উৎপাদন চলবে।
তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, কারখানা বন্ধ রাখতে হলে স্টক একচেঞ্জকে জানাতে হয়। কোম্পানির এসব তথ্য আবার ডিএসই ও সিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তবে দুপুর ২টা পর্যন্ত শেয়ারবাজারগুলোর ওয়েবসাইটে এমন তথ্য জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে জানান, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের কারখানা বন্ধ হবে এমন কোন তথ্য ডিএসইতে আসেনি। আসলে ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হত।
এর আগে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করা ৩ সদস্যের একটি চক্রকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চক্রটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতো। চাহিদামতো টাকা পেলে দুর্বল কোম্পানির নামেও ভালো তথ্য ছড়িয়ে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা হতো। টাকা না পেলে ভালো কোম্পানির নামে ছড়ানো হতো গুজব। এভাবে অসাধু চক্রগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে আসছে।
তবে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে প্রায়ই এমন অসত্য তথ্য প্রচার করে দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। গুজব রটানো এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
জানতে চাইল অর্থসংবাদকে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটানো ব্যক্তিদের আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের বিরুদ্ধে বিএসইসির পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কিছু বিষয় পুলিশ সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া এবং তা অব্যাহত থাকবে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে অসত্য ও গুজব রটানোর বিষয়টি কমে আসবে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ‘এন’ ক্যাটাগরি থেকে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ২৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৫। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও ৩৬ দশমিক ২৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
এমআই