ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে বৈশ্বিক ব্যয় রেকর্ড ১৩ শতাংশ বেড়েছে

২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর ব্যয় ১৩ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৯১.৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে প্রাক্কলনে উঠে এসেছে। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স-এর (আইসিএএন) হিসাবে এ প্রাক্কলন উঠে এসেছে।

আগের বছরের তুলনায় গত বছর ১০.৭ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করা হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে। ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি।

রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত ব্যাপক ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে শক্তিধর দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়েছে। এর দরুন খরচ বেড়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনেও।

বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশই এ অস্ত্রের পেছনে খরচ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিএএন।

২০২৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে চীন, ১১.৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ খাতে বেইজিংয়ের মোট ব্যয় ওয়াশিংটনের চেয়ে অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে ব্যয় করেছে ৫১.৫ বিলিয়ন ডলার।

গত বছর পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর ব্যয়ের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া, ৮.৩ বিলিয়ন ডলার। এর পরই যুক্তরাজ্য (৮.১ বিলিয়ন ডলার) ও ফ্রান্সের (৬.১ বিলিয়ন ডলার) অবস্থান।

তবে তথ্যপ্রদানে স্বচ্ছতা না থাকায় কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র বা আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি ঘোষণা না করা তিন দেশের (ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েল) ব্যয়ের হিসাব নিয়ে জটিলতা আছে।

গবেষণার অন্যতম লেখক সুসি স্নাইডার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নিশ্চিতভাবে ‘পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে’। এই অর্থ অস্ত্রের পেছনে খরচ না করে পরিবেশ ও সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যবহার করা যেত বলে মনে করেন তিনি।

সুসি স্নাইডার বলেন, এই শত শত কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এবং পৃথিবীর জীবনকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা প্রাণী ও গাছপালাকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করা যেত। সেইসঙ্গে এই অর্থ দিয়ে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার উন্নতি করা যেত।

আইসিএএন তাদের গবেষণা শুরু করার পর গত পাঁচ বছরে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে ব্যয় ৩৪ শতাংশ বা ২৩.২ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যয় ৪৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ব্যয় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। আর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে এ ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক চালানোর পর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উপর্যুপরি পশ্চিমা দেশগুলোকে তার দেশের দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মে মাসে ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিরিজ মহড়াও দেওয়া শুরু করেছে রাশিয়া।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) সংগৃহীত অন্যান্য তথ্য বলছে, সক্রিয় পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে সক্রিয় পারমাণবিক ওয়ারহেড ৯ হাজার ৫৮৫টি। সক্রিয় ওয়ারহেড বাড়ার পেছনে মূল অবদান চীনের। বেইজিংয়ের ওয়ারহেড ৪১০ থেকে বেড়ে ৫০০-তে উন্নীত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সবচেয়ে বড় পারমাণবিক রাষ্ট্র রয়ে গেছে। ১৯৫০-এর থেকেই তারা বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। এই দুটি দেশের কাছেই মোট ওয়ারহেডের প্রায় ৯০ শতাংশ।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজার ৭০৪টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের বিপরীতে রাশিয়ার ৪ হাজার ৩৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন বা মজুত রয়েছে।

সিপ্রির গবেষকরা বলেছেন, রাশিয়া ২০২৩ সালের জানুয়ারির তুলনায় অপারেশনাল বাহিনীর সঙ্গে প্রায় ৩৬টি বেশি ওয়ারহেড মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও মস্কো তার কোনো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে মোতায়েন করেছে বলে প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। যদিও পুতিন ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রকাশ্যে বেলারুশে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিবৃতি দিয়েছেন।

প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত অপরিবর্তিত, অর্থাৎ ২২৫টিই আছে (ফ্রান্সেরও ২৯০টিই আছে আগের মতো)। তবে তিন বছর আগে যুক্তরাজ্য বলেছিল, রাশিয়া ও চীনের ‘হুমকি’ ঠেকাতে তারা ট্রাইডেন্ট ওয়ারহেডের সংখ্যার সীমা বাড়িয়ে ২৬০টি করতে ইচ্ছুক।

সিপ্রির গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) কর্মসূচির পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্রকে (আর কখনও) এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখিনি।’

শেয়ার করুন:-
শেয়ার