ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

পারিশ্রমিক ছাড়াই মক্কায় মসজিদের নকশা করেন তিনি

মসজিদ আল-হারাম ও আন-নাবাওয়ি (মসজিদে নববি হিসেবেও পরিচিত) মসজিদের নকশা এবং তা পুন:নির্মাণ করেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল ইসমাইল। তিনিই প্রথম প্রকৌশলী হিসেবে হারামাইন শরীফাইনের সব রকম নকশা ও পুন:নির্মাণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অসাধারণ দক্ষতা থাকলেও, এই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি কোনো রকম পারিশ্রমিক নিতে অস্বীকার করেন।

রাজা ফাহাদ এবং বিন লাদেন কোম্পানি চেষ্টা করেও তার তৈরি করা নকশা ও নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানের জন্য তাকে এক পয়সাও দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, আমি কেন পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জায়গায় কাজ করার জন্য টাকা নেব, তাহলে শেষ বিচারে আমি আল্লাহকে কী জবাব দেব?

তার পুরোটা জীবন বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনকে গোপনীয় রাখতে পছন্দ করতেন। এ কারণে তার বেশিরভাগ সময় কাটত ইবাদত করে।

তিনি যখন মসজিদ আল-হারাম ও মসজিদ আন-নাবাওয়ির নকশা ও পুন:নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সেসময় তার বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে। এরপর তিনি তার বাকি জীবন পুরোটা এসব পবিত্র জায়গায় কাজ করে কাটিয়ে দেন এবং সেটা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে কিছু না জানিয়েই।

১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তি মিশরের হাইস্কুল থেকে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং সবচেয়ে কম বয়সে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ইউরোপে যান ইসলামিক স্থাপত্যকলা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের জন্য।

তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ৪৪ বছর বয়সে। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার আগে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, এরপর তিনি আর কখনো বিয়ে করেননি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেকে আরাধনার কাজে সমর্পণ করেন।

মোহাম্মদ কামাল ১০০ বছরের বেশি সময় বেঁচে ছিলেন।

আল হারাম ও আন-নাবাওয়ির অসাধারণ নকশা ছাড়াও, ভবনগুলো পুন:নির্মাণে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তা ছিল খুবই দুষ্প্রাপ্য।

যদি এসব পবিত্র জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়ে থাকে, তাহলে দেখবেন সৌদি আরবে যতই গরম পড়ুক, আল হারাম মসজিদের মেঝে স্পর্শ করলেই ঠাণ্ডা লাগে। যে কারণে এই মেঝেটা সবসময় ঠাণ্ডা থাকে তা হলো এতে সাদা মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্নো হোয়াইট মার্বেল খুবই দুষ্প্রাপ্য, যা লেবানন থেকে আনা হয়।

ড. মোহাম্মদ কামাল গ্রীসে গিয়ে আরেকটা দুষ্প্রাপ্য মার্বেল পাথর কিনে আনেন যা কিনা অস্বাভাবিক উজ্জ্বল এবং এর সাদা রং গরম আবহাওয়ায় ঘর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

যখন আন-নাবাওয়ি মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় সেই সময় সৌদি আরবের বাদশা ড. কামালকে স্নো হোয়াইট মার্বেল ব্যবহার করতে বলেন।

মসজিদ আল-হারাম বা মক্কার মসজিদ, ইসলামের পবিত্রতম স্থান যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত।

ইতিহাসে অসংখ্যবার এটির আকার বর্ধিত করা হয়, যাতে প্রতি বছর হজ্জ ও উমরাহ পালনের জন্য আসা অসংখ্য মুসল্লিদের এতে জায়গা দেয়া যায়।

বাদশাহ ফাহাদের সময়কালে এটিকে বর্ধিত করার পর মসজিদটির পুরো এলাকার আয়তন দাঁড়িয়েছে তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার।

সাধারণ সময়ে এটি আট লক্ষ ২০ হাজার মুসল্লিকে জায়গা দিতে সক্ষম। তবে হজের সময় কিংবা মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজানে এখানে ১০ লাখেরও বেশি মুসল্লি জায়গা পেয়ে থাকেন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার